মানুষকে সন্তুষ্ট করার পরিণতি!

মানুষকে সন্তুষ্ট করার পরিণতি!


এক ব্যক্তি তার ঘোড়ায় চড়ে সফরে বের হয়েছে। সাথে স্ত্রী ও পুত্র হেঁটে যাচ্ছে। একটি গ্রাম অতিক্রম করার সময় লোকেরা বলতে লাগল, “দেখ কত বড় নিষ্ঠুর ব্যক্তি! স্ত্রী-সন্তানদেরকে হাঁটিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আর নিজে ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে আরামে যাচ্ছে।”
 
একথা শুনে লোকটি ভাবলো, লোকেরা ঠিকই তো বলছে। এই ভেবে সে ঘোড়া থেকে নেমে গেল এবং ছেলেকে ঘোড়ায় চড়িয়ে নিজে স্ত্রী সহ হেঁটে যেতে লাগল।

কিছুদূর যাওয়ার পর ছেলেকে ঘোড়ার পিঠে দেখে লোকেরা বলল, “দেখ, ছেলেটা কত বড় বেআদব! নিজে ঘোড়ায় চড়ে যাচ্ছে আর মাতা পিতাকে হাঁটিয়ে নিচ্ছে।”
 
লোকটি ভাবল, এরা তো ঠিকই বলেছে। সুতরাং এবার স্ত্রীকে ঘোড়ায় বসিয়ে বাপ-বেটা হেঁটে যেতে লাগল। অতঃপর আরেকটি গ্রাম অতিক্রমকালে লোকেরা বলতে লাগল, “একেই বলে স্ত্রী শাসিত স্বামী!”

লোকটি ভাবলো, এরাও তো ঠিকই বলছে। এই ভেবে সে স্ত্রী-পুত্র সবাইকে নিয়ে পুনরায় ঘোড়ায় চেপে বসল।
 
অতঃপর অপর এক গ্রাম অতিক্রমকালে লোকেরা এ দৃশ্য দেখে বলল, “ঘোড়াটাকে একেবারে মেরে ফেলবে? একটা ঘোড়ায় এক সাথে কতজন মানুষ সওয়ার হয়েছে দেখ!”

লোকটি ভাবল, সবাই ঠিক বলছে। এবারে তারা সকলে ঘোড়া থেকে নেমে পড়ল এবং ঘোড়ার লাগাম ধরে হাঁটতে লাগলো।
 
কিছু পথ অতিক্রমের পর লোকেরা বলতে লাগল, “অকৃতজ্ঞ বান্দা একেই বলে। আল্লাহর নে‘মতের কোনো কদর নেই। নিজের যানবাহন আছে, অথচ সবাই হেঁটে মরছে। পালাক্রমে এক একজন করে চড়লেও তো পারে। সওয়ার হওয়ার যদি ইচ্ছা না থাকত তবে ঘোড়াটি সাথে নিয়ে আসার কি দরকার ছিল? ঘরে বেঁধে রেখে আসলেই তো ভালো ছিল।”
 
লোকটি দেখল, ঘোড়ায় চড়ার কোন পদ্ধতিই আর বাকী নেই। সুতরাং এখন ঘোড়ায় না চড়ে এবং ঘোড়াকে শুধু হাঁটিয়ে না নিয়ে অন্য কোন পদ্ধতি আছে কি-না তাই করতে হবে।
 
লোকটি একটি বুদ্ধি আঁটল। একটি লম্বা বাঁশ নিয়ে আসা হলো। বাঁশে ঘোড়ার চার পা বেঁধে ঘোড়াকে ঝুলিয়ে বাঁশের দুই দিক থেকে বাপ-বেটা ঘাড়ে করে চলতে লাগলো। ঘোড়ার মাথা নীচের দিকে আর পা উপরের দিকে। একটি নদী পার হওয়ার জন্য তারা যখন সাঁকো পার হচ্ছিলো, তখন এই অদ্ভুত দৃশ্য দেখে পাড়ার ছেলেরা সব ‘হো হো’ করে হাসতে লাগল এবং চিৎকার করে উঠল।
 
তাদের চিৎকারে ঘোড়া ভয় পেয়ে এক ঝাঁকুনি মেরে ছিটকে নদীতে পড়ে গেল। ওদিকে বাঁশের বাড়ি খেয়ে দুই বাপ-বেটা উপুড় হয়ে পড়ে কারো মাথা কাটল, কারো থুতনি কেটে রক্ত বের হতে লাগলো।
 
লোকটি দেখল, মানুষকে সন্তুষ্ট করার বিপদ কত মারাত্মক। এত চেষ্টা করেও মানুষকে সন্তুষ্ট করা গেল না। অবশেষে ঘোড়াও হারাল, মাথাও কাটল। আমও গেল, ছালাও গেল।
 
শিক্ষা : আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্যই সব কিছু করা অপরিহার্য। লোকে কি বলবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করা সমীচীন নয়। কেননা একসাথে সবাইকে সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়।