বাংলাদেশে এত গরম কেন?

বাংলাদেশে এত গরম কেন?


পৃথিবীর ইতিহাসে গত ১ লক্ষ ২৫ হাজার বছরের মধ্যে বিগত দশক ছিল সবচেয়ে উত্তপ্ত। এমনকি বিগত ২০ লক্ষ বছরের মধ্যে বর্তমানে পৃথিবীর কার্বণ ডাই অক্সাইডের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের তাপমাত্রা এত দ্রুত বেড়ে চলেছে যে, চলতি শতাব্দীর শেষের দিকে, পৃথিবীর বেশ কিছু জায়গা সম্পূর্ণ বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। বৈশ্বিক উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সেই প্রভাব বাংলাদেশেও বেশ ভালোভাবেই পড়েছে। চলতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতেই ঢাকাসহ বাংলাদেশের ৪৫টিরও বেশি জেলার উপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

পৃথিবীর চরম আবহাওয়াগত পরিস্থিতির একটি চূড়ান্ত রূপ হলো তাপপ্রবাহ বা দাবদাহ। ইংরেজিতে একে বলা হয় Heat Wave।  আবহাওয়া ও জলবায়ু নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাপপ্রবাহকে নানা ভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে। তাপপ্রবাহের সাধারণ সংজ্ঞা হলো, কোন অঞ্চলে বাতাসের তাপমাত্রা যদি অতি বৃদ্ধি পায় এবং সেই সাথে আর্দ্রতা বেড়ে যায় তবে তাকে তাপপ্রবাহ বলে। তবে শুধু গরম বৃদ্ধি পাওয়াকেই তাপপ্রবাহ বলে না। গরমের অস্বাভাবিক স্থায়িত্বকে বোঝাতেও তাপপ্রবাহ শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

তাপপ্রবাহ

একটি তাপপ্রবাহ ৩ দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সাধারণত একটি শতাব্দীতে মাত্র কয়েকবার তাপপ্রবাহ দেখা যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ১৯৫০ সালের পর থেকে তাপপ্রবাহ বেড়েই চলেছে। আর বর্তমানে তাপ প্রবাহ পৃথিবীর জলবায়ুর একটি নিয়মিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে বৈশ্বিক তাপপ্রবাহে পৃথিবী জুড়ে নিয়মিত ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এবং খরা প্রবণ অঞ্চলগুলিতে তাপপ্রবাহের সময় দাবানল সৃষ্টি হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে।

বিশ্বের একেক দেশের আবহাওয়া ও গড় তাপমাত্রা অনুযায়ী তাপপ্রবাহের মাত্রা ভিন্ন ভিন্ন হয়। বাংলাদেশে সাধারণত কোনো স্থানের তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে সেখানে Heat Alert বা সতর্কবার্তা জারি করা হয়।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বাতাসে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ ধরা হয়। এছাড়া তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে হলে সেটিকে তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়ে থাকে। আর তাপমাত্রা যদি ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠে যায় তখন তাকে বলা হয়, অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

তাপপ্রবাহ

যশোর চুয়াডাঙ্গা এবং পাবনা জেলায় ইতোমধ্যে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপর তাপমাত্রা উঠে যাওয়ায় এসব অঞ্চলে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ তৈরি হয়েছে। এর বাইরে বাংলাদেশের বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়াবিদদের মাধ্যমে জানা যায়, বাংলাদেশে এপ্রিল হচ্ছে সবচেয়ে গরম মাস। কারণ এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি থাকে। সে কারণে এই সময়ে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি সূর্যকিরণ পায়। বাংলাদেশে প্রতি বছরই এপ্রিল মাসে সাধারণত ২-৩ টি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং ১-২ তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্তই টানা ৩ বার হিট অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। এপ্রিল মাসে সারা দেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু এ বছর সেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন,

এবছরের তাপপ্রবাহ অতীতের যেকোনো সময়কে ছাড়িয়ে যেতে পারে। সামনের তাপমাত্রা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। গড় তাপমাত্রা বাড়লে ২০২৪ সাল বাংলাদেশের উষ্ণতম বছরও হতে পারে।

এর আগে ২০২৩ সালকেও বাংলাদেশের উষ্ণতম বছর হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছিল। কারণ গত বছর একটানা ৩ সপ্তাহ তাপপ্রবাহ স্থায়ী হয়েছিল। চলতি বছর হয়তো সেই পরিস্থিতিও ছাড়িয়ে যেতে পারে। তার মানে, এখন থেকে প্রতি বছরই অতীতের তাপমাত্রার রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহবিদরা বলছেন,

পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে বাংলাদেশে এ বছর এপ্রিলে গড় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে। শুধু তাই নয়, কাছাকাছি সময়ের মধ্যে বড় ধরনের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।

তাপপ্রবাহ

মূলত বঙ্গোপসাগর থেকে মৌসুমী বায়ু না আসায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে না। এমনকি ভারী বৃষ্টিপাতের জন্য জুন মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। এর মাঝে দেশের কোথাও কোথাও বৃষ্টি হলেও সেই বৃষ্টিই গরম কমানোর ক্ষেত্রে খুব একটা কাজে আসবে না বলেও জানিয়েছেন আবহাবিদরা। ২০২৪ সালের পুরো মে মাস জুড়ে তীব্র তাপপ্রবাহের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দেশে হিট-স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়েছে। হিট-স্ট্রোক প্রতিরোধ ও নিজেকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। হিট-স্ট্রোকের লক্ষণ ও চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে নিচের ব্লগটি পড়ুন।


হিট-স্ট্রোকঃ তীব্র গরমের মধ্যে প্রাণঘাতী বিপদের লক্ষণ ও চিকিৎসা