হিট-স্ট্রোকঃ তীব্র গরমের মধ্যে প্রাণঘাতী বিপদের লক্ষণ ও চিকিৎসা

হিট-স্ট্রোকঃ তীব্র গরমের মধ্যে প্রাণঘাতী বিপদের লক্ষণ ও চিকিৎসা


আমাদের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৯৮.৬°F (37°C)। যখন পরিবেশের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং শরীর তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তখন শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বেড়ে ১০৪°F (40°C) এর উপরে চলে যেতে পারে। এই অবস্থাকেই বলা হয় 'হিট-স্ট্রোক'।

দেশে প্রচন্ড গরমে হিটস্ট্রোক করে প্রায়ই মৃত্যুর খবর পাওয়া যাছে।  তাই সকলের উচিত সতর্ক থাকা। হিটস্ট্রোক শুধু দুর্বল ব্যক্তিদের নয় একজন সুস্থ সবল মানুষের‌ও হতে পারে, যদি শরীরের তাপমাত্রা ১০৪° ফারেনহাইটের বেশি হয়ে যায়।

হিটস্ট্রোকের অনেকগুলো লক্ষণ রয়েছেঃ

  • শরীর অতিরিক্ত গরম হয়ে যাওয়া কিন্তু কোন ঘাম না হ‌ওয়া। হাত দিয়ে ধরলে শরীর প্রচন্ড গরম লাগবে।
  • রোগী কনফিউজড হয়ে যায়। আপনি কি বলছেন তা বুঝতে পারে না এবং সে কি উত্তর দিচ্ছে সেটাও বোঝা যায় না।
  • ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া।
  • বুক ধড়ফড় করা।
  • বমি বমি ভাব কিংবা বমি হ‌ওয়া।
  • অজ্ঞান হয়ে যাওয়া ।

এসব লক্ষণ কার‌ও মধ্যে দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে। এবং যেতে যেতে রোগীর অবস্থার উন্নতির জন্য কিছু কাজ করতে হবে যাতে রোগীর শরীর ঠান্ডা হয়। যেমনঃ

  • রোগীকে গরম জায়গা থেকে ঠাণ্ডা জায়গায় নিয়ে আসতে হবে অর্থাৎ যেখানে ছায়া আছে, ফ্যান আছে বা এ.সি আছে। যদি সেটা সম্ভব না হয় তাহলে রোগী যে জায়গায় আছে সে জায়গাটা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করতে হবে। ফ্যান চালিয়ে দিবেন কিংবা হাতপাখা দিয়ে বাতাস করবেন।
  • রোগী যদি অতিরিক্ত কাপড় চোপড় পড়া থাকেন তাহলে বাতাস চলাচলের জন্য যতটুকু সম্ভব কাপড় খুলে দিতে হবে।
  • শরীর ঠাণ্ডা করার জন্য পানি ছিটা দিতে পারেন অথবা কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দিতে পারেন। এবং শরীর মুছে দেয়ার সময় বাতাস করবেন ইনশাআল্লাহ এতে করে রোগীর শরীরের পানি শুকিয়ে চামড়া ঠাণ্ডা হয়ে যাবে।
  • বরফ জোগাড় করতে পারলে সেটি কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রোগীর বগলের নিচে এবং ঘাড়ের উপর দিয়ে রাখতে পারেন।
  • রোগীর যদি হুঁশ থাকে তাহলে তাকে পানি পান করাতে হবে এবং ডাবের পানি বা স্যালাইনের পানিও খেতে দিতে হবে।

হিটস্ট্রোক হ‌ওয়ার আগে কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে উপরোক্ত কাজগুলো করলে ইনশাআল্লাহ হিটস্ট্রোক এড়ানো সম্ভব। হিটস্ট্রোকের হ‌ওয়ার আগে যে লক্ষণগুলো দেখা যায়। যেমনঃ

  • মাথা ঘোরা বা মাথা হালকা হালকা লাগা। মনে হচ্ছে যে, অজ্ঞান হয়ে যাবে। (রোগী যদি অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে তাকে শুইয়ে পা দুটো একটু উপরে তুলে দিতে হবে। এতে করে ব্রেনে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে)।
  • প্রচন্ড ঘামা (ঘেমে পড়নের জামাকাপড় ভিজে যাওয়া)।
  • বমি বমি ভাব হওয়া। 
  • প্রচন্ড গরম লাগা।
  • অনেক তৃষ্ণা পাওয়া। 
  • মাংসপেশী ঠেসে ধরা।
  • মাসল ক্রেমস

মাসল স্পাজম মাসল ক্রাম্পস নামেও পরিচিত। যখন পেশি অনিচ্ছাকৃত এবং জোরপূর্বক সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে এবং শিথিল হতে পারে না তখন একে মাসল স্পাজম বলে।

এসব লক্ষণ দেখা দিলে উপরোক্ত কাজগুলো করবেন। সাধারণত উপরোক্ত কাজগুলো করলে আধা ঘন্টার মধ্যে রোগীর ভালো লাগা শুরু করে। যদি তা নয় অর্থাৎ রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটে কিংবা বিপজ্জনক কোনো লক্ষণ দেখতে পান তাহলে অবশ্যই দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে নিয়ে যেতে হবে।


Report This Post

All sources, including information, images, and videos, for our posts are listed here . If there are any copyright claims, please report this post or contact us or mail at info@beeblogquester.com.