তোমার উপর আমার কোন অভিযোগ অভিমান নেই, ভালো থেকো প্রিয় অন্য কারো হয়ে। [আত্মকথা-১৩]

তোমার উপর আমার কোন অভিযোগ অভিমান নেই, ভালো থেকো প্রিয় অন্য কারো হয়ে। [আত্মকথা-১৩]

Background Music


তুমি একদিন বলেছিলে, আমাকে ছাড়া তুমি থাকতে পারবে না কখনো। আমাকে ছাড়া কখনো অন্য কারো হবে না। জানো আমার নিজের থেকে সব থেকে বেশি বিশ্বাস তোমাকে করতাম।

তোমার চোখে আমি দেখেছি আমাকে হারানোর ভয়। কিন্তু বুঝতে পারিনি কোনটি অভিনয়। তোমার বাসা থেকে জানা জানি হওয়ার পরে, তিনটা মাস তোমাকে লুকিয়ে রেখেছিল। আমি তোমাকে পাগলের মত খুঁজেছি। তোমার আত্মীয় স্বজনের বাসার সামনে। সকালে বাসা থেকে বের হলে ফিরতে ফিরতে রাত দশটা এগারোটা বেজে যেত।

মনের মাঝে একটা বিশ্বাস কাজ করতো তুমি তো আমারই। অন্য কারো কখনো হতে পারো না। তিন মাস পরে যখন তোমার বাসার সামনে গিয়ে দেখি বিয়ের গেট। নিজেকে ধরে রাখতে পারতেছিলাম না। যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ছে। তোমার আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে খোঁজ নিলাম। তোমাকে বাসায় রাখেনি।

নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি, করেছি নিজের হাতকে ক্ষতবিক্ষত। অঝোরে কান্না করেছি রুমের দেয়ালের মাঝখানে। গায়ে হলুদের দিন চাইলে তোমার সামনে যেতে পারতাম। কিন্তু যাইনি, আমি ভেবেছিলাম তুমি আসবে। কিন্তু সেটা যে আমার মনের একান্ত ভুল ছিল, সেটা তখনো বুঝতে পারিনি।

তোমার বিয়ের দিন ১৭/০২/২০২৩ তারিখে তোমার বয়স হয়নি বলে পুলিশ পাঠালাম। এমপির কাছে কল করলাম। অনেক অনুরোধ করেছিলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে ফোন করেছিলাম শুধু তোমার বিয়ে আটকানোর। এক্সিলেন্ট পুলিশ সবাই তোমার বাসায় গিয়েছিল। কিন্তু তোমার বুদ্ধিমান বাবা আগে থেকেই তোমার বয়সটা জন্ম নিবন্ধনে বাড়িয়ে নিয়েছিল।

অনেক চেষ্টা করেও আমি পারিনি আটকাতে। শুধু তোমার পরিবারের সম্মানের কথা ভেবে, যদি চাইতাম তোমার বরের গাড়ি এলাকায় ঢুকতে পারবে না। হয়তো সম্ভব ছিল তখন মানুষজন তোমাকে নিয়ে কথা বলতো। এতে আমার আরো বেশি খারাপ লাগতো।

প্রশাসন তোমার বাসা থেকে চলে আসে, নিজেকে খুব একা মনে হচ্ছিলো।আশেপাশে অনেক বন্ধুবান্ধব, তারপরও শূন্যতা কাজ করেই যাচ্ছিলো। আমি নিজেকে মানিয়ে নিলাম হয়তো তুমি পরিস্থিতির শিকার। তুমি ফিরবে বিয়ের পরে হলে ও। কতটা বিশ্বাস তোমার উপরে ছিলো, বিয়ে হয়ে গেল খুব তাড়াতাড়ি।

তোমার ফ্যামিলি আমার ভয়ে তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিলো তোমার শ্বশুর বাড়ির দিকে। আমি বাইক নিয়ে তোমার বিয়ের গাড়ি পিছু পিছু ছুটতে থাকলাম। একটা সময় আমার শ্বশুর বাড়ির সামনে চলে আসলাম। তোমার গাড়ির গেট খুলে দেওয়া হলো। তোমার গাড়িটার গেটের সামনে গিয়ে বাইক ধার করালাম। তোমার চোখে যখন চোখ পরলো, নিজের চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারিনি।

তোমাকে নামিয়ে নেওয়া হলো গাড়ি থেকে। ভিতরে আর প্রবেশ করতে পারলাম না। বাইকটা নিয়ে বাসার দিকে ফিরতে থাকলাম। আর তোমার সাথে কাটানো স্মৃতি গুলোকে ভাবতে থাকলাম। বিশ্বাস ছিল তুমি বিয়ের পরে হলেও ফিরে আসবে আমার কাছে। কিন্তু আর ফিরে আসলে না।

বিয়ের দুই মাস পরে হঠাৎ তোমার বাসার সামনে দেখা হয়ে গেল। তুমি আমাকে একটা মিনিট সময়ও দিলে না তোমাকে দেখার জন্য তুমি ভিতরে চলে গেলে। তুমি আমাকে বুঝিয়ে দিলে সময়ের সাথে মানুষ পরিবর্তন হয়। আর অর্থ থাকলে ভালোবাসা কিনে নেওয়া যায়। সত্যিই তুমি আমাকে একা করে চলে গেলে। আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে গেলে এক গুচ্ছ স্মৃতি। মানুষ কথাটাই সময়কে ভালো রাখার জন্য। বাকিটা পথ একাই চলতে হয়। আজো অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে। তোমার উপর আমার কোন অভিযোগ অভিমান নেই, ভালো থেকো প্রিয় অন্য কারো হয়ে।