বিশ্ব ইজতেমা: ইসলামের এক মহাসম্মেলন

বিশ্ব ইজতেমা: ইসলামের এক মহাসম্মেলন


প্রতিবছর বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে লাখ লাখ মানুষ হজ্জের পর একত্রিত হন  মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত। বলছি ইজতেমার কথা। এই ইজতেমা ‘কেন কী ভাবে এবং কবে শুরু হয়? বাংলাদেশে কেন হয় এবং কবে থেকে ইজতেমাকে বিশ্ব ইজতেমা বলা হয়?’ - সে প্রশ্নগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করব আজকের এই ব্লগে।

ইজতেমার গোড়াপত্তন হয় ভারতে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে সাধারণত ডিসেম্বর কিংবা জানুয়ারি মাসে এই জমায়েত বাংলাদেশের হয়ে আসছে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। বাংলাপিডিয়া দেওয়া তথ্য বলছে, ‘১৯২৬ সালে হযরত মাওলানা ইলিয়াস (র.) ভারতের উত্তর প্রদেশের মেওয়াত এলাকায় তাবলিগ আন্দোলনের গোড়াপত্তন করেন। একই সঙ্গে এলাকা ভিত্তিক সম্মিলন বা ইজতেমার আয়োজন করেন। কালক্রমে পাবলিক সমগ্র উপমহাদেশ বিস্তার লাভ করে এবং উপমহাদেশের বাইরেও এর প্রভাব পড়ে।

বিশ্ব ইজতেমা

ইজতেমা ও তাবলিগ জামাত সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। তাবলিগ জামাতের ওয়েবসাইটে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘প্রথম বড় ধরনের ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় বর্তমান ভারতের গুরুগ্রাম নামে একটি জায়গায়।’

১৯৪১ সালের নভেম্বরের ২৮, ২৯ ও ৩০ তারিখ অনুষ্ঠিত ইজতেমায় প্রায় ২৫ হাজার মানুষ অংশ নেন। বহু মানুষ ৪০-৫০ মাইল দূর থেকে পায়ে হেঁটে এসে ইজতেমায় অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪০ দশকের শেষের দিকে বাংলাদেশে ইজতেমার সূত্রপাত হয় চট্টগ্রামকে কেন্দ্র করে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে হজে যাওয়ার সময়ে মানুষ সেখানকার হজ ক্যাম্পে জড়ো হতেন। আর সেখান থেকেই শুরু হয় আঞ্চলিক ইজতেমা।

বাংলাদেশের প্রথম তাবলীগ জামাত নিয়ে আসেন তাবলীগ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ইলিয়াসের ছেলে মোহাম্মদ ইউসুফ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক এবং গবেষক ডক্টর আবদুর রশিদ BBC Bangla কে বলেন,

১৯৪৬ সালে বাংলাদেশে ঢাকার রমনা পার্কের কাছে কাকরাইল মসজিদ, যেটা সেসময় মাওয়ালিয়া মসজিদ নামে পরিচিত ছিল, সেখানে একটা সম্মেলন হয়। এরপর হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে।

কেমন লোক হতো তখন ইজতেমায় সেটার একটা ধারণা পাওয়া যায়, ১৯৬৫ সাল, ঢাকার কাকরাইল মসজিদে একটি জামাতে উপস্থিত থাকা তখনকার সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র খান শাহাবউদ্দীন নাফিসের কথা থেকে। তিনি BBC Bangla কে বলেন,

এখন যেমন বিদেশ থেকে প্রচুর মুসলমান ইজতেমায় অংশ নেন সে সময় অবশ্য অন্যান্য দেশ থেকে লোকজন আসেনি। সে সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ছিল। আর ছিল গ্রামের মানুষ।

তাহলে তখনকার ইজতেমা থেকে বর্তমান বিশ্ব ইজতেমা হলো কীভাবে? এবং কবে থেকে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক এবং গবেষক ড. আব্দুর রশিদ বলেন,

বিশ্ব ইজতেমা তাবলীগ এর নাম নয়, বরং তাবলিগের লোকেরা এটাকে বার্ষিক সম্মেলন বলতেন।

১৯৬৬ সালে ইজতেমা হয় টঙ্গীর মনসুর জুট মিলের কাছে। এর পরের বছর ঠিক করা হয় ইজতেমা হবে টঙ্গীর তুরাগ নদীর কাছে। একটা সময় তাবলীগ জামাতের পক্ষ থেকে বিদেশে লোক পাঠানো শুরু করা হয়। মূলত সে সময় থেকেই মানুষ বিশ্ব ইজতেমা ডাকতে শুরু করে। বিশ্ব ইজতেমা নাম নিয়ে তাবলিগ জামাত এর মধ্যে শুরুতে বিতর্ক থাকলেও সময়ের সাথে সাথে বিশ্ব ইজতেমা নামটি প্রচলিত হয়ে যায়।

বিশ্ব ইজতেমা

ইজতেমার ধারণা ভারতে শুরু হলেও ভারত ভাগের পর পূর্ব পাকিস্তানে ইজতেমা হতো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এটি ভারত, পাকিস্তান বা অন্য কোনো দেশে না হয়ে বাংলাদেশে স্থায়ী হয়েছে। ধারনা করা হয় এর একটি বড় কারন সে সময় বাংলাদেশে ভিসা পাওয়া সহজ ছিল।

গবেষকরা মনে করেন বাংলাদেশে বিশ্ব ইজতেমা হওয়ার পিছনে কিছু রাজনৈতিক কারনও ছিল। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বাংলাদেশ তুলনামূলক ভাবে নিরপেক্ষ স্থান ছিল। তবে তাবলীগের ইজতেমা যে বিশ্বের অন্য কোথাও হচ্ছে না তা কিন্তু না। পাকিস্তানেও বিশ্ব ইজতেমা হয় বাংলাদেশের বিশ্ব ইজতেমার আগে এবং পরে। 


Report This Post

All sources, including information, images, and videos, for our posts are listed here . If there are any copyright claims, please report this post or contact us or mail at info@beeblogquester.com.