পোড়া লেহেঙ্গা

পোড়া লেহেঙ্গা

Background Music


বঙ্গবাজারের দোতলা, বিয়ের লেহেঙ্গার শোরুম। রমজানের শুরুতে চাকরিতে যোগ দেয় এগার বছরের রিপন। জোহরের নামাজ শেষে মহাজন গদিতে এসে বসে। রিপন কাছে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। মহাজন বলে, কিছু কবি?

কাকা। ইদের পর বড় বোনের বিয়া। আমারে একটা লেহেঙ্গা দিবেন, রোজার মাসের বেতন, বোনাস কাইটা রাখার পর যেই টেকা বাকী থাকবো, হেই টেকা মাসে মাসে বেতন থিকা কাইটা নিয়েন।

মহাজন হাসে, কত দামেরটা নিবি?

ভালোটা। আমার বড় বইন। হের কোলে কইরা বড় হইছি। হেই বইন।

মাসে মাসে বেতন থিকা কাটতে হইবো না। তোর যেইডা ভালো লাগে, নিয়া যাইস।

খুশিতে অনেকক্ষণ কথা বলতে পারে নাই রিপন। মন দিয়ে কাজ করে। লেহেঙ্গা ভাঁজ দেখে আর শিখে। পাইকারদের মালের গাট্টি কাঁধে করে নিয়ে নামিয়ে দেয়। মার্কেট বন্ধ হলে দোকানেই ঘুমাতো রিপন, আর মনে মনে ভাবতো, কোন রঙের লেহেঙ্গায় বড় বোনকে সুন্দর দেখাবে।

আজ খুব ভোরে আগুন লাগে মার্কেটে। ভয়াবহ আগুন। পাশাপাশি তিনটা মার্কেট, দুপুরের মধ্যেই পুড়ে ছাই। পঞ্চাশটা দমকল ইউনিট, পুলিশ, সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী এবং সাধারণ মানুষের সহযোগীতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সকাল থেকে রিপমের মামা পাগলের মতো খুঁজছে। আর্তনাদ করে বলছে, আমার ভাইগ্নারে কি মরনের লাইগা আমি চাকরিতে দিছি? আমার রিপন, রিপনরে। তোর মারে আমি কি জবাব দিমু!

এখন সন্ধ্যা, রিপনকে পাওয়া যায় নাই। হয়তো লেহেঙ্গার ছাইয়ের সাথে মিলে মিশে আছে, আলাদা করতে পারবে কেউ?