গরু আর গাধার মজার গল্প

গরু আর গাধার মজার গল্প


এক কৃষকের ছিল একটি গাধা ও একটি গরু। কৃষক বোঝা আনা-নেওয়া ও চলাচলের বাহন হিসেবে গাধাকে ব্যবহার করতো আর গরু দিয়ে হালচাষ করতো। গম ও ধান মাড়াইয়ের কাজেও গরুকে ব্যবহার করা হতো। একদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একনাগাড়ে কাজ করে গরু যখন ঘরে ফিরলো তখন অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে ক্লান্ত হয়ে একা একাই বিড়বিড় করে কী যেন বলছিল। গরুকে বিড়বিড় করতে দেখে গাধা বললো - 

গাধাঃ আরে বাবা, হয়েছে কী? বিড়বিড় করে কি বলছো?

গরুঃ তোরা গাধার দল আমাদের দুঃখ-কষ্টের কি বুঝবি? আমাদের দুঃখ-কষ্ট কেউ বুঝেনারে, কেউ বুঝে না।

গাধাঃ  বুঝবো না কেন? অবশ্যই বুঝবো! তাছাড়া তুই যেমন বোঝা টানিস আমরাও তেমনি বোঝা টানি। আমাদের মধ্যে তফাৎটা কোথায় দেখলি?

গরুঃ তফাৎ অবশ্যই আছে। গাধাকে বোঝা টানা ছাড়া আর কোনো কাজে ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু জমি চাষ করা, ফসল মাড়াই করা, কলুর ঘানি টানা এসব কষ্টের কাজ আমাদের করতে হয়। কাজ শেষ হওয়ার পর ব্যথা-বেদনায় সারারাত চোখে ঘুম আসে না। তোদের কি এত কষ্ট করতে হয়?

গরুর কষ্টের কথা শুনে গাধার মনটা খারাপ হয়ে গেল। গরুকে কষ্ট থেকে রেহাই দেয়ার জন্য সে একটা বুদ্ধি বের করলো। এরপর গরুকে উদ্দেশ্য করে বললো -

গাধাঃ তুই যদি চাস তাহলে আমি এমন একটা বুদ্ধি দিতে পারি যাতে তোকে আর মাঠে যেতে হবে না।

গরুঃ গাধার মাথায় আবার বুদ্ধি আছে নাকি? না না, তোর বুদ্ধি অনুযায়ী চলতে গেলে আমার বিপদ আরো বাড়বে।

গাধাঃ শোন্ ! মানুষ আমাদেরকে যত গাধা মনে করে আমরা কিন্তু আসলে তত গাধা নই। আর এ জন্যেঈতো আমাদেরকে হালচাষ ও ঘানি টানার কাজে কেউ লাগাতে পারে না। তুই একবার আমার কথা অনুযায়ী কাজ কর, তাহলে দেখবি তুইও আমার মতো সুখে আছিস।

গরুঃ ঠিক আছে বল দেখি, তোর বুদ্ধিটা কি?

এরপর গাধা গরুকে অসুস্থ হবার ভান করতে পরামর্শ দিলো। গরু নিজেকে বাঁচানোর জন্য গাধার পরামর্শ অনুযায়ী হাত-পা সোজা করে ঘরে শুয়ে রইল এবং হাম্বা হাম্বা রবে ‘উহ্‌ আহ্‌’ করতে লাগলো। কৃষক এসে উঠানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। তখন বাধ্য হয়ে গোয়াল থেকে বের হলো এবং অন্য কোন উপায় বের করার জন্য চিন্তা করতে লাগলো। কৃষক চলে যাওয়ার পর গরু গাধাকে ধন্যবাদ দিল। ধন্যবাদ পেয়ে গাধাও খুশীতে নেচে উঠলো। কিন্তু গাধার খুশী বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। কিছুক্ষণ পরই কৃষক গোয়াল ঘরে ফিরে এলো এবং গরুর বদলে গাধাকেই মাঠে নিয়ে গেল। গাধার কাঁধে লাঙ্গল-জোয়াল বেঁধে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একটানা জমি চাষ করার পর কৃষক কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেয়ার জন্য একটি গাছের ছায়ায় বসলো। এ সময় গাধা মনে মনে ভাবতে লাগলো 

গাধাঃ গরুকে বাঁচাতে গিয়ে আমি নিজেই বিপদে পড়ে গেলাম! সত্যি সত্যিই আমি একটা গাধা। তা না হলে এমন বোকামী কেউ করে?

এসব ভাবার পর নিজেকে বাঁচানোর জন্য গাধা চিন্তা করতে লাগলো। হঠাৎ সে গরুকে দেয়া বুদ্ধিটিই কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিল। সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী গাধা জমিতে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো এবং কান ফাটা চিৎকার দিয়ে আকাশ-বাতাস ভারী করে তুললো।


চিৎকার শুনে কৃষক গাধার কাছে এলো। এরপর তাকে মাটি থেকে উঠানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু কিছুতেই উঠাতে পারলো না। এরপর কৃষক তার লাঠি দিয়ে গাধাকে বেদম পেটাতে শুরু করলো। পেটাতে পেটাতে কৃষক বললো - 

কৃষকঃ মুর্খ কোথাকার! দেখতেই পাচ্ছিস, গরুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এরপরও সব জেনে শুনে তুই কুড়েমি শুরু করেছিস! তোর দুধ কোন কাজে আসে না, গোশতেও কোন ফায়দা নেই। তারপরও ভেবেছিস তোকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো? আজ যদি কাজ না করিস তাহলে তোকে মেরেই ফেলব।

গাধা দেখল অবস্থা বিপজ্জনক। তাই সোজা হয়ে দাঁড়ালো। প্রথম দিকে বিরক্তির সাথে এবং ধীরে ধীরে মনোযোগ দিয়ে কাজে লেগে গেল। কাজ করার সময় গাধা বিড়বিড় করে বলতে লাগলো- যেভাবেই হোক আজ রাতে গরুকে কৌশলে পটাতে হবে যাতে কাল সকালে মাঠে যায়।

যাই হোক, সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করে বাড়ীতে ফিরল গাধা। বাড়ী ফিরেই সোজা গিয়ে ঢুকলো গোয়াল ঘরে। গাধাকে দেখেই গরু নড়েচড়ে বসল। এরপর বললো- 

গরুঃ মাঠ থেকে এলি নাকি? এবার নিশ্চয়ই দেখেছিস, কি কঠিন কাজইনা আমাদের করতে হয়।

গাধাঃ না না, মোটেই কঠিন নয়। আমার তো মনে হয়, খুবই আরামদায়ক এবং সোজা কাজ এটি। কিন্তু অন্য একটি বিষয়ে আমার মনটা ভীষণ খারাপ। তোকে বললে তুইও কষ্ট পাবি।

গরুঃ হাল চাষের চেয়েও কষ্টের কিছু আছে নাকি? ঠিকাছে খুলেই বল, কষ্ট পাবো না।

গাধাঃ ব্যাপারটা তেমন কিছু না। আজ দুপুরে যখন মাঠে কাজ করছিলাম, তখন মালিক তার এক বন্ধুকে বলছিল, আমার গরুটা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছে । মনে হয় বাঁচবে না। তাই ঠিক করলাম, কাল যদি ভাল না হয় তাহলে জবাই করে ফেলবো।

এ কথা শুনে গরু ভয়ে কাঁপতে লাগলো। তারপর সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলল - 

গরুঃ তুই সত্যি বলছিস তো? যদি তাই হয় তাহলে কাল থেকেই কাজে লেগে পরতে হবে। মরার চেয়ে কাজ করে খাওয়া অনেক ভাল। তোর মত গাধার বুদ্ধিতে চলতে গিয়েই তো আমার সামনে বিপদ এসে হাজির হয়েছে। আর কোনদিন আমি তোর কথা শুনবো না।

গাধাঃ তোরে বুদ্ধি দিয়ে তো আমিও কম শাস্তি পেলাম না। আমি তোর উপকার করতে গেলাম আর তুই কিনা আমাকে দোষ দিচ্ছিস! গরুর দল বড়ই অকৃতজ্ঞ।

এভাবে কথা কাটাকাটির মধ্যদিয়ে রাত পোহালো। পরদিন সকালে কৃষক এসে গরুকে ধাক্কা দিতেই সে লাফিয়ে উঠলো। তখন গরু আর গাধাকে নিয়ে সে মাঠের দিকে রওনা হলো। যাওয়ার সময় কৃষক তার ছেলেকে ডেকে বললো -

কৃষকঃ তুই আরেকটি লাঙ্গল জোয়াল নিয়ে আয়। গাধাকেও আজ থেকে গরুর পিছু পিছু হাল চাষে কাজে লাগাবি! আর শোন, আরেকটা মোটা লাঠিও নিয়ে আসিস। গাধা আবার ছংবং করতে পারে।