তিন চোরের গল্প
গভীর রাত। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক ছাড়া চারদিকে আর কোনো সাড়াশব্দ নেই। এ রকম পরিস্থিতিতে আবুল বেপারী হাজির হয়েছেন এক নারিকেল বাগানের সামনে। উদ্দেশ্য নারিকেল চুরি করা। ২০ বছর ধরে সে এ পেশায় আছেন। চুরি করে তার সংসার চালান।
অনেক নারিকেল ধরেছে এমন একটা গাছ দেখে তরতর করে ওপরে উঠে পড়লেন আবুল বেপারী। কোমর থেকে দা বের করে এক কাঁদি নারকেল কেটে নিচে নামিয়ে রেখে আবার ওপরে উঠলেন। পরের কাঁদি নারিকেল কাটতে গিয়েই ঘটল দুর্ঘটনা! পা পিছলে গেল। পতন ঠেকাতে হাতের দা ফেলে নারিকেলের কাঁদি জাপটে ধরলেন। ঝুলতে থাকলেন সেটা ধরেই। বেশ কিছুক্ষণ ঝোলার পর আবুল বেপারী লক্ষ করলেন পাশের গ্রামের কালু চোরাও নারিকেল চুরি করতে এসেছেন। আবুল বেপারী তাকে ডাকলেন, ‘কালু...ও কালু’।
ডাক শুনে কালু চোরা প্রথমে ভাবলেন ভূত। দৌড় দিতে যাবেন এমন সময় আবুল বেপারী বললেন, ‘আরে ভয় পাইস না। আমি আবুল বেপারী।’
কালুঃ আরে আবুল ভাই, আপনে?
আবুলঃ হ ভাই। আমিও চুরি করতে আসছি। কিন্তু এখন ফাইসা গেছি। আমারে বাঁচা।
আবুলকে ঝুলতে দেখে কালু চোরা যা বোঝার বুঝে ফেললেন। মনে মনে ভাবলেন, ইনকাম করার এটা একটা দারুণ সুযোগ। সে বলল, ‘বাঁচাতে পারি তবে এক শর্তে।’
আবুলঃ আমি যেকোনো শর্ত মানতে রাজি আছি। বল কী শর্ত?
কালুঃ আমারে নগদ ৫০০ টাকা দেওয়া লাগব।
আবুলঃ আচ্ছা দিব। তাড়াতাড়ি বাঁচা।
কালু চোরা দেরি করলেন না। আবুল যে গাছে ঝুলছেন সেই গাছ বেয়ে ওপরে উঠতে শুরু করলেন। জায়গা মতো পৌঁছে যেই না আবুলের পা ধরে গাছের দিকে আনতে চেষ্টা করলেন, অমনি কালুর পা-ও পিছলে গেল। পতন ঠেকাতে সে আবুলের পা জাপটে ধরলেন। ঝুলতে থাকলেন সেটা ধরে।
আবুলঃ এটা কী হলো কালু?
কালুঃ আমার পা-ও পিছলে গেছে।
আবুলঃ হায় রে! এখন আমরা দুজনই নারিকেল ধরে ঝুলছি। কে বাঁচাবে আমাদের? আজকে চুরি করতে আসাই ঠিক হয়নি। দিনটাই কুফা।
দুজনই কাঁদতে শুরু করলেন। তাদের কান্না শুনে সেখানে হাজির হলেন গেদু। সেও চোর। তবে পেশায় নতুন। নারিকেল চুরি করতে অন্যদের মতো সেও সেখানে হাজির হয়েছিলেন। সে বলল, ‘ভাই সাহেব, আপনারা ওপরে কী করবার লাগছেন?’
আবুলঃ আরে গেদু যে! তুই এইখানে?
গেদুঃ হ, আসছিলাম চুরি করতে। তা আপনারা ওপরে কী করেন? ঝুলাঝুলি খেলবার লাগছেন না কি?
কালুঃ আবুল ভাইরে বাঁচাতে গিয়ে আমিও ফেসে গেছি ভাই। আমাদের জলদি বাঁচান।
গেদুও সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ছাড়লেন না। সে বললেন, ‘এক শর্তে বাঁচাব। আমাকে নগদ এক হাজার টাকা দেওয়া লাগবে।’
আবুলঃ কোনো ব্যাপার না। দেব এক হাজার টাকা। বেঁচে থাকলে অনেক টাকা ইনকাম করা যাবে।
গেদু দেরি করলেন না। গাছ বেয়ে উঠতে শুরু করলেন। প্ল্যান করলেন, প্রথমে নিচে ঝুলতে থাকা কালুকে উদ্ধার করবেন। তারপর আবুলকে। প্ল্যান অনুযায়ী এক হাতে কালুর পা ধরলেন। সেটাকে টেনে যেই না গাছের দিকে আনতে যাবেন, অমনি তার অপর হাত ফসকে গেল। পতন ঠেকাতে কালুর পা আঁকড়ে ধরলেন। তারপর ঝুলতে লাগলেন সেটা ধরে।
অবস্থাটা এমন দাঁড়াল, নারিকেল ধরে ঝুলছেন আবুল। তার পা ধরে ঝুলছেন কালু। আর কালুর পা ধরে ঝুলছেন গেদু। এ রকম পরিস্থিতিতে আবুলের মাথায় বাড়তি আয়ের চিন্তা এলো। সে হাঁক দিলেন, ‘তোরা আমার কাছে কে কয় টাকা পাবি?’
কালুঃ আমি পামু ৫০০ টাকা।
গেদুঃ আমি এক হাজার টাকা।
আবুলঃ এবার বল তোরা দুজনে আমাকে দুই হাজার টাকা দিবি? নয়তো আমি হাত ছেড়ে দেব। রাজি?