আমি এখন তার কথা বেশি মনে করি না! [আত্মকথা-১৯]

আমি এখন তার কথা বেশি মনে করি না! [আত্মকথা-১৯]

Background Music


আমার জীবনের গল্প শুনলে হয়ত আপনাদের হাসি পাবে। গল্পটা ২০১১ সালের শেষের দিকে শুরু। ঠিক গল্প না জীবন গল্প। 

আমি সদ্য ক্লাস ৫ পাস করে ৬ এ উঠলাম। তখন আমি আমার জীবনটা হাসিখুশি ভাবে কাটাচ্ছি। ভালোবাসা কি জিনিস তা তখন বুঝতাম না। তখন একটা মেয়ের আগমন আমার জীবনে। নাম ছিল শাহনাজ। মেয়েটা আমার কাছে দুনিয়ার সব থেকে সুন্দর মেয়ে। তাও ক্লাস ৬ এর শুরুতে স্কুলে খেলাধুলা হচ্ছিল তখন তাকে আমি প্রথম দেখি। আমি একটু বেশিই লাজুক প্রকৃতির মানুষ। মেয়েদের সাথে আমি কথা বলতে অতিরিক্ত লজ্জা পেতাম। আমি তাকে শুধু অনুসরণই করতাম। কিন্তু কথা বলার সাহস করতাম না। এভাবে কেটে যায় প্রায় ৬/৭ মাস। একদিন সে নিজেই আমাকে বললেন, 'আফজল কেমন আছ তুমি?'

আমি কোন উত্তর দিতে পারি নাই। শুধু মুখ বন্ধ করে শুধু তাকিয়ে ছিলাম তার চোখের দিকে। এভাবে দিন কাটতে কাটতে ক্লাস ৭ উঠি। ১ বছর কথা না বলেই কাটিয়ে দেই। ক্লাস ৭ উঠে দুইজন দুই শাখাতে চলে যাই। প্রতিটা ক্লাস শেষ করে একবার দেখতে যেতাম তাকে। সে আমার দিকে মাঝে মাঝে তাকিয়ে দেখতো। এভাবে আস্তে আস্তে আমাদের কথা শুরু হয়। এরকম কথা বলতে বলতে সে আমার এক আত্মীয়ের খালাতো বোন পরিচয় পাই। প্রতিটা ক্লাস শেষে আমি তাদের ক্লাসে গিয়ে থেকে বসতাম। ২/৩ মিনিট কথা বলার আগে স্যার চলে আসত আবার দৌড় দিয়ে নিজের ক্লাসে চলে যেতাম। এভাবে সপ্তম শ্রেণীটি পার করে দেই। অষ্টম শ্রেণীতে উঠে আবার এক শাখাতে দুইজন পরি। সে যে বেঞ্চে বসতো আমি ঠিক পাশের বেঞ্চে বসতাম। আমি ক্লাসে বাসা থেকে ঠান্ডা পানি নিয়ে আসতাম ক্লাস শেষে শুধু তাকে দিতাম। তখনও আমাদের দুজনের মধ্যে শুধু কথা বলার সম্পর্ক ছিল। সে অনেক মজার মানুষ, ঢং করতে অনেক ভালবাসতেন। আমার সাথে প্রতিটা ক্লাসেই ঢং করতেন।

হঠাৎ করে তার স্কুলে আসা বন্ধ হয়ে গেল। প্রায় দু-তিন মাস স্কুলে আসে নাই। আমি একটু অতিরিক্ত চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। স্কুলে গেলে কোনো কিছুতে মন থাকত না শুধু তার কথা চিন্তায় থাকতো। হঠাৎ একদিন সে স্কুলে আসলেন। স্যার এতদিন অ্যাবসেন্ট দেখে জিজ্ঞেস করলেন এতদিন কই ছিলে? উত্তরে উনি বললেন আমাদের আমেরিকার ভিসা হয়েছে এজন্য ঢাকায় ছিলাম স্যার। আমার জীবনের ঘন্টা এখানেই বেজে গেছে। ঐদিন আর তার সাথে ভালো করে কথা হয় নাই। সে অনেক মনমরা মনমরা ছিল। কারো সাথে ভালো করে কথা বলেন নাই। পরের দিন সে আমার সাথে কথা বলছেন।

সময় যত ঘনিয়ে আসছে আমার দম তত বন্ধ হয়ে আসছে। কিছুই ভালো লাগে না কিছুতে মন বসে না। শুধুই একটাই চিন্তা, তাকে আমি হারিয়ে ফেলবো। আস্তে আস্তে সময় খুবই কাছে চলে আসছে। 

তার ফ্লাইট ছিল ১৫/১০/২০১৪। পনের বিশ দিন আগ থেকে আমার চোখে পানি সবসময় থাকত। তখনো আমি ভালোবাসা জিনিসটা গভীরভাবে বুঝতাম না। সব সময় কাঁদতে থাকতাম আর আর চিন্তা করতাম এই বোধহয় তাকে হারিয়ে ফেলছি। স্কুলের সবার কাছ থেকে সে বিদায় নিয়ে চলে আসেন কিন্তু আমার কাছ থেকে সে বিদায় নেন নাই। 

১৩/১০/২০১৪ আমি আর আমার এক বন্ধু ( সিফাত ) তার বাসায় নিচে প্রায় ৫ ঘন্টা দাঁড়িয়েছিলাম। একটিবার সে বেলকুনিতে আসবে আর আমি তার কাছ থেকে শেষ বিদায় টুকু নিয়ে নিবো। কিন্তু বিকেল হয়ে গেল তার দেখা না পেয়ে বাসায় চলে গেলাম। কিন্তু না সে ঠিকই আমার কাছ থেকে বিদায় নিবেন। রাত্রে আমার আত্মীয়ের বাসা থেকে আমার বাসায় আসেন আর বললেন "আফজল আমি যাইরামগি, আমার লাগি দোয়া করিও।" (সিলেটি ভাষা)। তার সাথে আমার শেষ কনভারসেশন এটি। 

পরের দিন সে বিকেলের দিকে সিলেট ত্যাগ করবেন এর পরের দিন ঢাকা থেকে ফ্লাইট। আমি সকালে উঠেই উনার বাসা নিচে চলে যাই। [শেষ একটি বারের মত দেখার জন্য] 

আজ ১৪/১০/২০২৩ ঠিক ৯টি বছর হয়ে গেল তার হাসি মুখখানি দেখা হয় নাই। অনেক কাঁদছি আমার চোখের জল শেষ হয়ে গেছে শুধু একমাত্র আল্লাহ আর আমি ছাড়া কেউ জানে না। 

এখন আমি ঠিকই টের পাচ্ছি, ভালোবাসা কি জিনিস। আমি এখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি আজ পর্যন্ত আমি একটা মেয়ের দিকে ভালোভাবে তাকান নাই। কোন মেয়ের দিকে চোখ পড়ার সাথে সাথে তার কথা মনে পড়ে। সে এখন যেখানেই আছে অনেক ভালো আছে সেটা আমি জানি। তিন চার মাস আগে তার বিয়েও হয়েছে শুনে অতোটা খারাপ লাগেনি মনে একটু শান্তিই লাগছিল। আমি এখন তার কথা বেশি মনে করি না, মনে করলে একটু ইমোশনাল হয়ে যাই এজন্য মন থেকে একটু দূরে রাখি। আমি এখন আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।