মানব ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি।

মানব ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলি।


মানব সভ্যতা আমরা যত উন্নত হচ্ছি, যত আধুনিক টেকনোলজি আবিষ্কার হচ্ছে, আমরা ততই প্রকৃতির থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আর ধীরে ধীরে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছি। কিন্তু যখনই প্রকৃতি তার ভয়ানক রূপ ধারণ করে, তখন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি যেমন ধ্বংস হয়, তেমন লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের প্রাণ হারায়। তো চলুন আজ আপনাদের জানাই সাতটি সবথেকে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে যা কয়েক নিমেষের মধ্যে আমাদের সভ্যতাকে ধ্বংস করে দিতে পারে।

ওয়াটার স্পাউট

আপনারা অনেকেই এই ওয়াটার স্পাউট এর নাম প্রথমবার শুনছেন। আসলে ওয়াটার স্পাউট অনেকটা টর্নেডোর মতো হয়। তবে এটা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমুদ্রে দেখা যায়। তীব্র গতিতে ঘুরতে থাকা হাওয়া যখন নদী বা সমুদ্রের পানিের সংস্পর্শে আসে তখন তার পানিকে উপরের দিকে টানতে শুরু করে। তবে এই ওয়াটার স্পাউট নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। কারণ এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সমুদ্রে হয়। অর্থাৎ উপকূল থেকে অনেকটা দূরে। কিন্তু মাঝে মধ্যে এটি উপকূলেও আছড়ে পড়ে। ওয়াটার্স স্পাউটে আজ পর্যন্ত সমুদ্রে মাছ ধরার ট্রলার বড় বড় জাহাজ এমনকী প্লেনেও ধ্বংস হয়ে গেছে।

ওয়াটার স্পাউট
ওয়াটার স্পাউট

টাইফুন

টাইফুন আসলে এক ধরনের ভয়ানক ঝড়। যার নিজের রাস্তায় আসা সব কিছুকে ধ্বংস করে দেয়। এমনই এক ভয়ানক টাইফুনে ফিলিপিনে দেখা গিয়েছিল। যেখানে এই ঝড়ের নাম রাখা হয়েছিল গনি। যা ভীষণই গতিতে ফিলিপিন এবং ইন্দোনেশিয়ার ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। এই তুফান কতটা ভয়ানক ছিল তা আপনারা এই বিষয়টিকে বুঝতে পারবেন যে, এর গতি ছিল ২২০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। ২৬ অক্টোবর থেকে ০৬ নভেম্বরের মধ্যে এই টাইফুন শুধু ফিলিপিন না বরং চীন এবং তাইওয়ানের ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। আর আপনাদের জানিয়ে দেয় ফিলিপিন বিশ্বের তৃতীয় দেশ যেখানে সবথেকে বেশি প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়

টাইফুন
টাইফুন

টর্নেডো

বায়ুমণ্ডলে হাওয়ার প্রেসার পরিবর্তনের কারণে টর্নেডো তৈরি হয়। একটা টর্নেডো দেড় কিলোমিটার চওড়া এবং ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। বেশিরভাগ টর্নেডো ফাঁকা জায়গা তৈরি হয়। কিন্তু ১৯৫৭ সালে আমেরিকার শহর মায়ামিতে এমন একটা টর্নেডো আসে যা সমুদ্র থেকে ধীরে ধীরে শহরের দিকে এগিয়ে আসছিল। এই টর্নেডোর আকার এত বড় ছিল যে শহরবাসী এই টর্নেডোর আকার দেখে ভয় পেয়ে যায়। যদিও শেষপর্যন্ত শহরে প্রবেশ করেনি কিন্তু টর্নেডোর আকার দেখে বিজ্ঞানীরা হতবাক হয়ে গিয়েছিল। কারণ এটি প্রায় পাঁচ কিলোমিটার চওড়া ছিল। আশাকরি বুঝতে পারছেন ঠিক কতটা ভয় ছিল।

টর্নেডো
টর্নেডো

ল্যান্ডস্লাইড

অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে পানি মাটির নিচে জমা হতে শুরু করে। যার কারণে মাটির নীচে কাদার পরিমাণ বেড়ে যায়। কিন্তু মাটির উপরিভাগ শক্ত থাকে। আর ঠিক তখনই ধস নামতে শুরু করে। এমন ল্যান্ডস্লাইড ৩০ ডিসেম্বর ২০২০  নরওয়েতে দেখা যায়। যেখানে সমুদ্রের কিনারায় প্রায় ২৪ একর জমি ধীরে ধীরে সমুদ্রের মধ্যে চলে যায়। এই জায়গায় ৮ থেকে ১০টি ফ্যামিলির বাড়ি ছিল, যা কয়েক নিমেষের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায়। এরকম ভয়ানক ল্যান্ডস্লাইড কারণ জানা যায়নি। তবে ওখানকার লোকজনের জানায় যে, তারা গত ৬০ বছরে এমন ভয়ানক প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হননি। এই ল্যান্ডস্লাইড কারণেই ভারতে প্রতিবছর দুইশ থেকে তিনশ মানুষ প্রাণ হারান।

ল্যান্ডস্লাইড
ল্যান্ডস্লাইড

ভলক্যানো বা আগ্নেয়গিরি

ভলক্যানো বা আগ্নেয়গিরির নাম শুনলে মাথায় আসে ফুটন্ত লাভা, কালো ধোঁয়া, আর চারদিকে সব কিছু আগুনে ধ্বংস হয়ে যাওয়া। মাটির নীচে থাকা টেকটনিক প্লেট যখন মুভমেন্ট করে তখন পৃথিবীর কেন্দ্রে থাকা গরম লাভা বিস্ফোরণের মাধ্যমে বাইরে বেরিয়ে আসে। আর এই ঘটনাকেই আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত বা ভলক্যানিক ইরেকশন বলা হয়। ১০ এপ্রিল ১৮১৫  সালে তাম্বুরাতে হওয়া এই ভলক্যানিক ইরেকশনকে দুনিয়া কখনও ভুলতে পারবে না। কারণ এটিকে বলা হয় আজ পর্যন্ত হওয়া সব থেকে ভয়াবহ ভলকানিক ইরাপশান। এর ভয়াবহতা আপনারা এটা আন্দাজ করতে পারবেন যে, যখন এই আগ্নেয়গিরিতে বিস্ফোরণ হয় তখন এখান থেকে ৫০ কিউবিক কিলোমিটার লাভা নির্গত হয়। এত পরিমাণ লাভা যে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার পর্যন্ত এলাকা লাভার মোটা চাদরে ঢেকে গিয়েছিল।

আগ্নেয়গিরি
আগ্নেয়গিরি

সুনামি

যেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলা হচ্ছে, আর ২০০৪ সালে সেই ভয়ানক সুনামির কথা উঠবে না তা হতে পারে না। ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় আসা ৯.১ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্প সাথে সাথে তার ধ্বংসলীলা চালিয়েছিল। যার কারণে সমুদ্রের বড় বড় ঢেউ উঠতে শুরু করে। এই সুনামির ঢেউ ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু ছিল। আর তীব্র গতিতে ভারত, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের দিকে এগিয়েছিল। সমুদ্রের কাছে থাকা সব শহর নিমেষের মধ্যেই পানির নীচে তলিয়ে যেতে শুরু করে। সুনামি আসতে লোকজনের মধ্যে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। কেউ বুঝতে পারছিল না তাদের কী করা উচিত। এই ভয়ানক সুনামিতে প্রায় ২ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান আর বহু মানুষ নিখোঁজ হয়ে যান।

সুনামি

সুনামি

ভূমিকম্প

ধরুন আপনি আপনার ঘরে বসে আরাম করছেন। আর ঠিক তখন আপনার বাড়ি জোরে জোরে কাপতে শুরু করেছে। বলছি ভূমিকম্পের বিষয়ে। অন্য যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে থেকে ভূমিকম্প সবথেকে বেশি ধ্বংসলীলা চালায়। দক্ষিণ আমেরিকার চিলিতে কিছুটা এমনই হয়েছিল। ২২ মে ১৯৬০ সালে যখন সব লোকজন দুপুরে নিজের বাড়িতে বিশ্রাম করছিল ঠিক তখনই ৯.৬ তীব্রতার ভূমিকম্প সবকিছু কাঁপিয়ে দিয়েছিল। এতে প্রায় ১৬০০ জন মানুষ প্রাণ হারান। আর প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ বাড়ি ছাড়া হয়ে যান। যাকে বলা হয় আজ পর্যন্ত হওয়া সব থেকে ভয়ানক ভূমিকম্প।

ভূমিকম্প
ভূমিকম্প

আপনারা কি কখনও কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সম্মুখীন হয়েছেন?