সিকাডা-৩৩০১

সিকাডা-৩৩০১


২০১২ সালের ৪ জানুয়ারী 4chan.org  নামের ইমেজ সাবমিশন সাইটে অজানা পরিচয়ে ১টি নতুন ছবি আপলোড হয়। যার সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে অতি দ্রুত। ছবিটিতে বলা হয় তাদের কিছু বুদ্ধিদিপ্ত ব্যক্তি লাগবে এবং তারা পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের বাছাই করতে চায়। 

তাদের ছবিতে গোপন সূত্র আছে যা ধরে এগিয়ে গেলেই একমাত্র তাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব। নীচে স্বাক্ষর হিসেবে দেয়া থাকে ৩৩০১ এই কোডটি। তাদের পরিচয় হিসেবে থাকে একটি পোকার ছবি ইংরেজিতে যেটার নাম Cicada

cicada

চিত্রঃ সিকাডার প্রথম ছবি

cicada-invite

চিত্রঃ সিকাডার বলা প্রথম ছবি

অনেক মানুষ কোড উদ্ধারে লেগে পড়ে। সে সময় অনেক মানুষ অনেকগুলো ধাপ পার করার পর একটি ধাপে এসে দেখতে পান পাঁচটি ভিন্ন দেশের জিপিএস কো-অর্ডিনেট দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন সাহায্যের মাধ্যমে এ ধাপটিও পার করে তারা আসেন শেষ ধাঁধায়। সে ধাঁধাটির সমাধানের পর ১টি ওয়েব লিংক দেওয়া হয় এবং যারা সেখানে যান তাদের সবাইকে অবাক করে দ্বারা লেখা উঠে,

"We are not laggards, but the best and most needed."

মানে,

"আমরা পশ্চাদ অনুসারী নয়, সর্বাপেক্ষা ভালোদের দরকার।"

ফলে এটি পরিষ্কার হয়ে যায় এই কোড কারো মাধ্যমে নয় সম্পূর্ন নিজেকেই ভাঙ্গতে হবে ফলে প্রথমবারের প্রায় সবাই ই ব্যার্থ হয়। 

প্রথমবারে দেয়া কোড পর্যায়ক্রমে প্রায় ১ মাস ধরে চলছিল। একটি কোড সমাধান করার পর তাদের সামনে নতুন  কোড আসতো। আর কোড গুলো ছিল অতি জটিল। সাধারন মানুষের পক্ষে এই কোড ভাঙ্গা এক কথায় অসম্ভব ছিল। 

এই কোড কেউ সম্পূর্ন রূপে একা ভাঙ্গতে পেরেছে কিনা তা এখন পর্যন্ত জানা যায় নি। আশ্চর্যের বিষয় হলো কারা এই কোড দিচ্ছে কিসের জন্য দিচ্ছে এটাও জানা সম্ভব হয়নি। 

তবে মানুষের জল্পনা কল্পনার কোন শেষ নেই নানারকম ধারনা সিকাডা কে নিয়েও আছে কারো মতে সিকাডা হল টপ ইন্টালিজেন্স। উদাহরণসরূপঃ- সি আই এ , এম আই সিক্স  এই রকম কিছু প্রতিষ্ঠানের গোপন  নিয়োগ উপায়। কারো মতে এরা এমন এক অদৃশ্য সংঘ যারা বিশেষ কোন উদ্দ্যেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। কেও কেও আবার একে এড়িয়া ৫১ এর গোপন কোন প্রযেক্ট এর অংশ দাবি করে। আবার কারো মতে এটি কোন হ্যাকার গ্রুপ যারা তাদের নতুন কোনো আক্রমনের লক্ষে ক্রিপ্টোগ্রাফিতে দক্ষ লোক খুজে বেড়াচ্ছে।

যে যাই বলুক না কেন এতটুকু নিশ্চিত এরা মজা করে গড়ে তোলা কোন সংগঠন নয়। এদের পেছনে রয়েছে অতি দক্ষ, ক্ষমতাবান, সম্পদশালী জনবল। কারন তাদের এই পাজেল কেবলমাত্র মাত্র সুনির্দিষ্ট কোন এলাকা ব্যাপী নয় এটি ছড়িয়ে আছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে।  

কিসের উপর ভিত্তি করে সিকাডা-৩৩০১ ধাঁধাঁ দেওয়া হয়? 

কেও যদি প্রশ্ন করে কোন বিষয় এর উপর পাজেল বা ধাধা দেয়া হয় কিন্তু এটি বলা বড়ই কঠিন হয়ে যাবে তার কারন হলো  প্রতিটি ধাধার শুরু  ছবির মধ্যের ১টি কথা দিয়ে হলেও পরের পর্যায় গুলোয় বিভিন্ন সময় নানারকম বিষয় উঠে এসেছে। যার মধ্যে কবিতা, শিল্পকর্ম, সঙ্গীত, সাহিত্য, ক্যালেন্ডার, দর্শন, গণিত, ক্রিপ্টোগ্রাফি, সংখ্যাতত্ব, প্রযুক্তিবিদ্যা এবং  প্রাচীন পাণ্ডুলিপি। এই ধাধার শুরু ইন্টারনেটে হলেও এর কার্যক্রম পরিচালিত হয় টেলিফোনে, গানে, দুস্প্রাপ্য বইতে, ছবি এমনকি বিভিন্ন জায়গায় ছাপানো কাগজের মাধ্যমেও, এবং তা প্রকাশ্য হয়েছে এনক্রিপশন এবং এনকোডিং করে।

এই ধাধার সিরিজগুলো একমাত্র কম্পিউটারে বসে সমাধান করা যাবে না, এর জন্য কম্পিটিটরকে নানারকম জায়গায় ভ্রমণ করতে হবে। ধাধার সূত্রগুলো কিউআর কোড হিসেবে লাগানো থাকে টেলিফোন/ইলেকট্রিক পোল কিংবা ডাকবাক্সে। এর জায়গার তালিকায়  ইউএস,  ফ্রান্স, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া ,রাশিয়া, জাপান, পোলাণ্ড, মেক্সিকো ও দক্ষিণ কোরিয়া রয়েছে । 

cicada qr

আবার কবে সিকাডা-৩৩০১ ফিরে আসে? 

২০১৩ সালের জানুয়ারিতে আবার হাজির হয় সিকাডা-৩৩০১ এবার থাকে একই ধরনের প্রায় নতুন একটি ধাধা। এই পর্যায়েও প্রতিযোগিরা একটি নির্দিষ্ট যায়গায় গিয়ে আটকিয়ে যায়। এবার ও প্রতিযোগীতা শেষ হয়ে যায় কেও এটির সমাধান করতে পেরেছিল কিনা তা জানা যায়নি।

পরবর্তীতে ২০১৪ ও ২০১৫ তে আর কোনো কোড বা ধাধা আসে নি। ফলে চারদিকে গুজব উঠে সিকাডা-৩৩০১ শেষ হয়ে যাওয়ার। কিন্তু সব কথা ভুল প্রমান করে ২০১৬ তে আবার নতুন ধাধা নিয়ে হাজির হয় সিকাডা-৩৩০১। যা প্রতিবছরই তারা পরিচালনা করছে।

২০১৭ সালে তাদের দেয়া সর্বশেষ তথ্য ছিল। তবে গার্ডিয়ানের মতে এই ধাধার সম্পূর্ন শেষ কেও করতে পারেনি কিংবা করলেও তার সম্মন্ধে কোনো তথ্য জানা যায় নি।

কে সিকাডা-৩৩০১ এর ধাধার সম্পূর্ন শেষ করছিলো? 

যে ব্যাক্তিকে নিয়ে সিকাডা-৩৩০১ কোড বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছিল সেই ব্যাক্তি হলো ৩৪ বছর বয়সী সুইডেনের অধিবাসী একজন ক্রিপ্টোগ্রাফি স্পেসালিস্ট জুয়েল এরিকসন।

 স্পেসালিস্ট জুয়েল এরিকসন

চিত্রঃ ক্রিপ্টোগ্রাফি স্পেসালিস্ট জুয়েল এরিকসন

মাত্র ৩ সপ্তাহের মধ্যে পৃথিবীর কঠিনতম এনিগমাটির সমাধান করা ব্যাক্তি ছিলেন তিনি। তা সত্ত্বেও দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তিনি নিজেও এই প্রতিযোগিতা হতে বাদ পড়েছিলেন। ভৌগলিক জটিলতার কারনে তিনি অন্য দেশে না গিয়ে সেই দেশে অবস্থিত তার বন্ধুর সাহায্য নেয়। যার জন্য তার পক্ষে আর সামনে এগোনো সম্ভব হয় না।

২০১২ সালে শুরু হওয়া বিস্ময়কর এই ধাধার কে বা কারা কিসের জন্য দিয়েছে তার কোনো ঠিক তথ্য প্রকাশ পায় নি। এত সুপরিকল্পিত, জটিল এই ধাধা কেও সমাধান করেছে কিনা এই সম্পর্কেও নেই কোন তথ্য। একে ইন্টারনেট  জগতের সর্বসেরা ৫ অমিমাংসিত রহস্যের মধ্যে ধরা হয় ।

হয়তো অদুর ভবিষ্যতে সিকাডার গোপনীয়তা প্রকাশ পাবে। সিকাডার বেশ কতিপয় ধাধার সমাধান ইন্টারনেট ব্যাপী বিদ্যমান কিন্তু পূর্নাংগ সমাধানের আগ পর্যন্ত তাদের সম্পর্কে হয়ত কিছুই জানা সম্ভব হবে না।