থেরানোস: সিলিকন ভ্যালি জালিয়াতি যা বিশ্বকে হতবাক করেছে। পর্ব -০১

থেরানোস: সিলিকন ভ্যালি জালিয়াতি যা বিশ্বকে হতবাক করেছে। পর্ব -০১


The successful warrior is the average man, with last-like focus.
-Bruce Lee

Elizabeth Holmes যাকে বলা হতো “Beauty with Brain, The next Steve Jobs”। যার স্থান হয়েছিল একদম Forbes Magazine কাভারে। তাবড় তাবড় উদ্যোক্তা ,পুঁজিবাদী থেকে শুরু করে US গভর্নমেন্ট এর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সবাইকে পটিয়ে তাদেরকে উল্লুক বানানোর যে অসাধ্য কাজ তিনি করেছেন তা যেকোনো সিনেমার গল্পকেও হার মানায়। তিনি ছিলেন একটা Health and Tech কোম্পানির Funder and CEO। যিনি এক সময় নিজেকে বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ কোটিপতি বানিয়েছেন। এখন তিনি আর কিছুই না। মাথায় ঝুলছে ২০ বছরের জেল আর মোটা অঙ্কের জরিমানা।

Elizabeth Holmes
Elizabeth Holmes

প্রচলিত ছিল যে, আঙুল থেকে নিঃসৃত কয়েক ফোঁটা রক্তের নমুনা দিয়ে কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কোম্পানির এডিশন নামের মেশিন করে ফেলবে শতাধিক জটিল ব্যয় সাপেক্ষ টেস্ট। তারা নাকি আমেরিকার সরকারের ২০০ মিলিয়ন ডলারের সাশ্রয় ঘটাবে। ডায়াগনোসিস ইন্ডাস্ট্রির চেহারাটাই বদলে দেবে। সেই অনুযায়ী তারা কোম্পানির নামকরণ করেছিল বেশ। থেরাপি এবং ডায়াগনোসিস এর মিলবন্ধনে Theranos

পুরুষশাসিত সিলিকন ভ্যালিতে আমরা যে একজন মহিলা উদ্যোক্তার জন্য গান গাইব সে আশায় গুড়েবালি। ২০১৫ তে The Wall Street Journal পর্যায়ক্রমে কিছু ইনভেস্টিগেটিভ আর্টিকেল পাবলিশ করে। যেখানে Theranos এর বেশ কয়েকজন Former Employee whistle blower হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে। তাসের ঘরের মত ভেঙে পড়ে Elizabeth Holmes এর স্বপ্ন। রাতারাতি একটা কোম্পানি হয়ে যায় সিলিকন ভ্যালির সবচেয়ে বড় স্ক্যাম। ইনভেস্টররা হারায় মিলিয়ন ডলার। It's a story of greed, fraud and full of propaganda। এই গল্পের Propagamdist ও Antagonist উভয় একই। Non other than Elizabeth Holmes Fortune Magazine এর মতে, The world's 19 most disappointing leaders এর মধ্যে একজন Elizabeth Holmes

Elizabeth Holmes

Elizabeth Holmes এর জন্ম ২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৪ আমেরিকার রাজধানী শহর ওয়াশিংটন ডিসিতে। তাদের আদি নিবাস বর্তমান ডেনমার্ক হাঙ্গেরি অঞ্চলে। তার বাবা একজন এনার্জি কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট, মা সরকারি কর্মচারী। তার ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডের দিকে তাকালে খুব সহজেই দেখা যায়, Elizabeth Holmes বেশ প্রভাবশালী ও ব্যবসায়ী পরিবার থেকে উঠে আসে। Elizabeth Holmes প্রথমে হিউস্টনের St. John's School এ ভর্তি হন।

স্কুল জীবনের প্রারম্ভে কম্পিউটারের প্রতি তার বিশেষ আগ্রহ জন্মায়। বলা হয় সে তার প্রথম ব্যবসা শুরু করে এক চাইনিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ C++ প্রোগ্রাম বিক্রি করে। এ সময় Elizabeth Holmes বাড়িতে ম্যান্ডারিন ভাষা শেখা শুরু করে। পরে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম এক্সপেন্সিভ ও প্রেস্টিজিয়াস প্রতিষ্ঠান স্ট্যানফোর্ডে ম্যান্ডারিন প্রোগ্রামে অ্যাডমিশন নেন। ২০০২ সালে হোম স্ট্যানফোর্ডের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন এবং তার সাথে স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে থাকেন।

Elizabeth Holmes with her mother
Elizabeth Holmes with her mother

ছোট থেকেই নাকি Elizabeth Holmes চেয়েছিল বিলিনিয়ার হতে। দ্রুত বিলিনিয়ার হওয়ার একটা সহজ পন্থা যেকোনো বড় সমস্যা সমাধান করা। Elizabeth Holmes ঠিক তাই করতে চেয়েছিল। প্রায় এক প্রকার কনভেনশনাল ইন্ডাস্ট্রিকে চ্যালেঞ্জ করে। কিন্তু কোনো স্টার্টআপ আর তা যদি হয় বায়োপিক রিলেটেড সেখানে দরকার প্রচুর পরিমান ক্যাপিটাল, ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচয়।

চলুন দেখি হোমস কীভাবে এই দুই সমস্যা একসাথে সমাধান করেছিল।

Elizabeth Holmes স্ট্যানফোর্ডে থাকাকালীন Genome Institute of Singapore (GIS) এর ল্যাবে কাজ করে। এবং সেখানে SARS CoV1 নিয়ে বেশ কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষা করে। ব্লাড স্যাম্পল সংরক্ষণের মাধ্যমে Elizabeth Holmes তার প্রথম পেটেন্ট অর্জন করেন। মূলত এখান থেকেই Elizabeth Holmes উত্থান।

এটা তো মেডিক্যাল ফিল্ডের পরিচয় কিন্তু ইন্ডাস্ট্রিতে?

স্ট্যানফোর্ডে চীনের ট্যুরে Elizabeth Holmes সাথে সাক্ষাৎ হয় তার থেকে ১৯ বছরের বড় Sunny Balwani। যিনি ছিলেন একজন মিলিয়নিয়ার, পাকিস্তানি ইমিগ্র্যান্ট। ১৯৯৯ সালের dotCom এর বোমের সময় সবচেয়ে বেশী মুনাফা অর্জন করেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা তার ছিল অসাধারন Tech দক্ষতা। ফলে Elizabeth Holmes এর হাতে আসে পেটেন্ট মিলিয়নিয়ার পার্টনার। আর Elizabeth Holmes এর মাথায় আসলো, “এটাই উপযুক্ত সময় নিজের একটা কোম্পানি খোলার”। অবশ্যই তা ছিল Theranos। যদিও শুরুতে এর নাম ছিল REAL TIME CURES। 

Sunny Balwani
Sunny Balwani

Elizabeth তার কোম্পানির গোড়াপত্তন করেছিলেন ঠিকই। কিন্তু অন্যান্য স্টার্টআপের মতো তার যাত্রাপথ মোটেও সুখকর ছিল না। Elizabeth বায়োটেক বা কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ডে কোনো বিশেষজ্ঞ কিংবা তার স্ট্যানফোর্ডে প্রফেসর কাউকে কনভিন্স করতে পারেনি। সবাই তার আইডিয়াকে অসম্ভব বলে দাবি করে। তার গাড়ি লক্ষ্য করে চলেছিল কয়েক রাউন্ড গুলি। কিন্তু কোনও কিছুই তাকে দমাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত Elizabeth তার স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এ দিন Channing Robertson এর সহযোগিতা অর্জনে সক্ষম হন। কেবল সহযোগিতায় নয়, Robertson Elizabeth এর কোম্পানির প্রথম বোর্ড মেম্বার হিসেবে যোগ দেন। এবং তিনিই প্রথম Elizabeth এর সাথে Venture capital যোগাযোগ করিয়ে দেন।

Channing Robertson
Channing Robertson

Elizabeth এর প্রথম বড় ইনভেস্ট ছিল Tim Draper। যিনি আবার Elizabeth এর বাল্যবন্ধু জেস স্ট্রিপারের বাবা। Tim Draper প্রথম মোটা অঙ্কের এক মিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করেন। ২০০৪ এর শেষ নাগাদ Elizabeth ৬ মিলিয়ন ডলার ফান্ড রেইজ করতে সক্ষম হয়। ২০১০ এর মধ্যেই ফান্ড গিয়ে পৌঁছয় ৯২ মিলিয়ন ডলারে। Elizabeth Holmes এর কী চমৎকার প্ররোচনা শক্তি ছিল তা একটা ঘটনায় টের পাওয়া যায়। তিনি মাত্র ২ ঘন্টা মিটিং এর পর আমেরিকার প্রাক্তন সেক্রেটারি অফ স্টেট George Shultz কে এতটাই ইমপ্রেস করেন যে, তৎক্ষণাৎ Theranos এর বোর্ড অফ ডিরেক্টর পদে বসতে সম্মত হন। 

Tim Draper
Tim Draper
George Shultz
George Shultz

বরাবরই Theranos তার গোপনীয়তা বজায় রেখে চলেছে। বিশেষ করে তার অন্দরমহলের খবর employee দের উপর কড়া মনিটরিং ইত্যাদি। ২০১৩ পর্যন্ত Theranos চলছিল সম্পূর্ণ স্টিলথ মোড়ে। সহজভাবে বললে কোনও প্রকার প্রেস-বিবৃতি ও অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ছাড়াই। ২০১৩ এর সেপ্টেম্বরের Elizabeth Holmes সরাসরি পাবলিকের সাথে যুক্ত হয়। Elizabeth বরাবর পাবলিক অ্যাপিয়ারেন্সে উপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেছিল। আর মিডিয়া তখন হুড়োহুড়ি লাগিয়ে দিয়েছিল কে আগে Theranos গল্প কাভার করবে। আর এই সুযোগে Elizabeth Holmes লুফে নেয় Fortune Magazine থেকে Forbes MagazineThe New York Times, Style Magazines থেকে Incorporated সবগুলোতেই কোথাও Cover Image এ, কোথাও স্পেশ্যাল স্টোরিতে স্থান পেয়েছিল Elizabeth। দিয়েছে TedMed, Bill ClintonJack Ma এর সাথে একই প্যানেল শেয়ার করে। ২০১৪ এর শেষের দিকে তার নামের অধীনে আসে ১৮ টি USA পেটেন্ট ও ৬৬ টি ফরেন পেটেন্ট।

Bill Clinton
Bill Clinton
Jack Ma
Jack Ma

পুরুষশাসিত সিলিকন ভ্যালিতে পাল্লা দিতে Elizabeth Holmes তার গলার স্বর পর্যন্ত ভারী করে তোলে। এছাড়া সে Steve Jobs এর অনুকরণে কালো সোয়েটার পরতে শুরু করে। এই সোয়েটার এর কোনো বিশেষ প্রভাব থাকতে পারে বলে আপনি মনে করেন? কে জানে হয়তো আছে! 

Theranos এতটাই ফুলে ফেপে ওঠে যে একটা সময় কোম্পানির ভ্যালুয়েশন দাঁড়ায় প্রায় ৯.৪ বিলিয়ন ডলারে। কিন্তু মিথ্যার পর মিথ্যা দিয়ে সাজানো Elizabeth এর সাম্রাজ্য Theranos এর পতনের দিন ঘনিয়ে আসতে থাকে ক্রমশ। একজন প্যাথলজিস্টের সন্দেহ পরামর্শে The Wall Street Journal এর ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট ও Blood Money বইয়ের লেখক John Carreyrou, ২০১৫ সালে ফ্রান্স থেকে আসা প্রচণ্ড চাপ উপেক্ষা করে পরপর বেশ কয়েকটি আর্টিকেল পাবলিশ করেন।


পরবর্তী অংশ ২য় পর্বে...



Report This Post

All sources, including information, images, and videos, for our posts are listed here . If there are any copyright claims, please report this post or contact us or mail at info@beeblogquester.com.