যে সাদা হাতি সংসার তছনছ করেছিল!

যে সাদা হাতি সংসার তছনছ করেছিল!


সাদা হাতি নাকি খুবই সম্মান আর সৌভাগ্যের প্রতীক গ্রামশাই সংসারের হালহদ্দ বিবেচনা না করেই যদি একটি হৃষ্টপুষ্ট সাদা হাতি সংসারে ঢোকান, তবে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে? এখুনি ঠিক তেমন একটা দৃষ্টান্ত হাতের কাছে পাওয়া না গেলেও অনুরূপ একটি ঘটনার কথা বলা যায়। এক্ষেত্রে সাদা হাতিটির নাম—অলিম্পিক গেমস।

Olympic game

বিশ্বের সেরা ক্রীড়া-প্রতিযোগিতা সাদা হাতির মতোই সুপ্রাচীনকাল থেকে সারাবিশ্বে সমাদৃত। প্রতি চারবছর অন্তর যখন যে-দেশে এই ক্রীড়ার আয়োজন হয়, সেই দেশ গৌরব এবং সম্মানের আসন পায় বিশ্ব-দরবারে।

১৯৭৬ সালে সেই সাদা হাতি, থুড়ি অলিম্পিক গেম্‌স্ অনুষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছিল কানাডা। মনট্রিল শহরে বসেছিল অলিম্পিকের আসর। আর সে-বছর কানাডা সরকারের অবস্থা দাঁড়িয়েছিল সেই মধ্যবিত্ত সংসারের কত্তামশাইটির মতোই, যাঁর অর্থের অসাচ্ছল্য যত-না তার চেয়ে বেশি অভাব সংসারের শৃঙ্খলা বজায় রাখার কাজের লোকের। ফলে যা ঘটবার তা-ই ঘটেছিল।

১৯৭৬ সালের অলিম্পিক
চিত্র: ১৯৭৬ সালের অলিম্পিক

মনট্রিল অলিম্পিক গেমস্ শেষ হবার পর সে দেশের সরকার হিসেব করে দেখলেন এই অনুষ্ঠান বাবদ মোট খরচ হয়েছে তখনকার হিসেবে প্রায় ১০০ কোটি ডলার যা ছিল সেই অলিম্পিকের প্রকৃত বাজেটের আটগুণ বেশি অর্থ সেদিন এই বিপুল পরিমাণ অর্থের ঘাটতি মেটাতে কানাডা সরকারকে যে-বিশেষ অলিম্পিক ট্যাক্স ধার্য করতে হয়েছিল আজও তা বহন করে চলেছে কানাডার জনসাধারণ।

শুধু কি তা-ই। তামাকের ওপর বাড়তি কর ধার্য করা ছাড়াও নতুন লটারি চালু করেও টাকা তোলার ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। এজন্য দায়ী করা যায় প্রধানত কর্মকর্তাদের অদূরদর্শিতা, ব্যাপক দুর্নীতি, খারাপ আবহাওয়া, এইসঙ্গে কর্মীদের অসহযোগিতাকেও। কর্মকর্তাদের অদূরদর্শিতার একটা নমুনা দেয়া থাক। একটি বিশেষ প্রতিযোগিতার জন্য মনট্রি কর্তৃপক্ষ খরচ করেছিল প্রায় ৫০ লক্ষ ডলার। ভেবেছিল প্রতিদিন যদি ১০ হাজার দর্শক উপস্থিত থাকে তবে সেই টিকিটের টাকাতেই খরচ পুষিয়ে যাবে, কিন্তু সেই 'আইটেম'-এ দর্শক হাজির হয়েছিল গোনাগুনভিতে ৩০০ জনের বেশি নয়।

1976 Olympic

অপচয় এবং দুর্নীতির এমন উদাহরণ আরও আছে। অলিম্পিক কর্তৃপক্ষের হিসেবমতো, গেমস-এর নিরাপত্তার জন্য ওয়াকি-টকি কিনতেই খরচ দেখানো হয়েছিল ১৫ লক্ষ ডলার। ১০ লক্ষ ডলার খরচ হয়েছে ৩৩টি ক্রেন ভাড়া করতে (প্রায় কেনা দামেই), ১৫ লক্ষ ডলার ব্যয়ের হিসেব দেখানো হয়েছে অনুষ্ঠানে শুধু অর্কেস্ট্রা আর সংগীত পরিবেশন বাবদ।

আরও মজার কথা হল গেম্‌স শেষ হবার সঙ্গে-সঙ্গেই ৩,৭০০ টনের মতো বিভিন্ন প্রবাসী, ১০ হাজার টেলিভিশন-সেট অনুষ্ঠান-কর্তৃপক্ষ একেবারে পানির দরে বিক্রি করে দেয় পুরনো বাজারে—অবশ্য সেগুলি আবার কী দরে কর্মকর্তাদের কাছেই ফিরে এসেছিল, সে-হিসেব কেউ নেয়নি।

তা হলে সমস্ত ব্যাপারটা, এক বিশৃঙ্খল মধ্যবিত্ত সংসারে সাদা হাতি পোষা ছাড়া আর কী বলা যায়। সে-দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী তো অনুষ্ঠান শেষে নিজেই কপাল চাপড়ে বলেছিলেন : এই দানবীয় ব্যয়সঙ্কুল আয়োজন এদেশের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ভিতটাই নড়িয়ে দিয়েছে।