হাঙর কেন ডলফিনকে ভয় পায়?
জলচর প্রাণীদের মধ্যে সম্ভবত ডলফিন আর হাঙ্গুরই মানুষের সবচেয়ে বেশি পরিচিত। তবে সেই পরিচিতির মধ্যে পার্থক্যের মাত্রাটাকে আকাশ পাতাল বললেও কম বলা হবে। একদিকে ডলফিন প্রাণীটিকে বুদ্ধিমান এবং মানুষের প্রতি বন্ধুসুলভ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এর বিপরীতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হাঙ্গর প্রাণীটি বিপদজনক মানুষখেকু হিসেবে পরিচিত। যদিও হাঙ্গর সম্পর্কে এই ধারণাটা একেবারেই সঠিক নয়। জেনে অবাক হবেন মুক্ত সাগরে সাধারণত হাঙ্গরই উল্টো ডলফিন প্রাণীটিকে ভয় পেয়ে এড়িয়ে চলে। হাঙ্গর মাছের এই অদ্ভুত আচরণের কারণ আপনাদের জানাতে এই ব্লগ।
ডলফিন আর হাঙ্গর দুটো প্রাণীর প্রধানত সাগরে বাস করে। যদিও এর মধ্যে হাঙ্গরকে মাছ বলা গেলেও ডলফিন কিন্তু মানুষের মতোই স্তন্যপায়ী একটি প্রাণী। একটা হাঙ্গরের পক্ষে তার পুরো জীবন জলের নিচে কাটিয়ে দেওয়া সম্ভব। কিন্তু ডলফিন পরিবারের প্রাণীদের শ্বাস গ্রহণ এবং নিঃশ্বাস ত্যাগের জন্য কিছুক্ষণ পরপরই সমুদ্র পৃষ্ঠে উঠে আসতে হয়। এর কারণে আর দশটা মাছের মতো হাঙ্গড়ও শ্বাস-প্রশ্বাস চালায় তার কানকোর মাধ্যমে। কিন্তু ডলফিনের জন্য তার মাথার উপর অবস্থিত একটি ছিদ্র ব্যবহার করে যা সরাসরি পানি থেকে অক্সিজেন সংগ্রহ করতে পারে না।
আনুমানিক বিশ লাখ বছর আগেও ডলফিন এবং তিমি জাতীয় প্রাণীদের পূর্বসূরিরা স্থলচ প্রাণী ছিল সবাই এর প্রয়োজনে ডাঙ্গায় ঘুরে বেড়ানো ওই প্রাণীগুলো ধীরে ধীরে জলচর তিমি এবং ডলফিনে পরিণত হয়েছে।
এক ধরনের মাছ হওয়ায় হাঙ্গরের লেচের ডানাটা খাড়া অবস্থায় থাকে ফলে এরা দ্রুত গতিতে ছুটে চলার সময় অনায়াসে ডান বা বাম দিকে মোড় নিতে পারে। অন্যদিকে ডলফিনের ক্ষেত্রে পেছনের দুই পা বিবর্তিত হয়ে লেজে পরিণত হওয়ায় এর ডানাটা সমান্তরাল অবস্থায় থাকে। ফলে এর জন্য সাঁতারের সময় উপর নিচ করাটা অপেক্ষাকৃত বেশি সহজ গুরুত্বপূর্ণ এই পার্থক্যের কারণে পানিতে ডলফিনের গতি হাঙ্গরের তুলনায় বেশি থাকে। একই কারণে পানিতে ছুটে চলার ক্ষেত্রেও এরা হাঙ্গরের তুলনায় অনেক বেশি সাবলীল।
চলুন এবার আর দেরি না করে জেনে নি শিকারি হিসেবে পরিচিত হাঙ্গরের বন্ধু সুলভ ডলফিনকে ভয় পাওয়ার মতো কি কারণ থাকতে পারে?
হাঙ্গরের জন্য এই ডলফিন প্রাণীটিকে এড়িয়ে চলার একটি বড় কারণ হচ্ছে এরা সবসময় দলবদ্ধ অবস্থায় চলাফেরা করে অন্যদিকে প্রায় সব প্রজাতির হাঙ্গরই নিভৃতচারি। সম্ভবত একাকী কোনো ডলফিনকে পরাস্ত করা একটা হাঙ্গরের জন্য তেমন পরিশ্রমের কাজ হবে না। কিন্তু দলবদ্ধ ২০ থেকে ২৫ টি ডলফিনের মুখোমুখি হওয়াটা Great White এর মতো হাঙ্গরের জন্য বেশ ভীতিকর ঘটনা। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত বড়ো মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়ায় ডলফিনের জন্য আক্রমণের কৌশল নির্ধারণও সহজ ব্যাপার।
বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী মাঝে মধ্যে কোনো হাঙ্গর কম বয়সী এবং দলছুট ডলফিন স্বীকার করলেও অনেক সময়ই আক্রান্ত ডলফিনটি জন্য দলের বাকিদের ডাক দেয়। সেই ডাক শুনে বাকি ডলফিন গুলো রীতিমতো হাঙ্গরটার দিকে তেড়ে আসে। হাঙ্গরটা পালানোর চেষ্টা করলে নিচ থেকে এক ডলফিন এসে তার পেটে সজোরে ধাক্কা দেয়। এর ফলে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে হাঙ্গরটিকে মৃত্যু বরণ করতেও দেখা গেছে। না পালিয়ে হাঙ্গরটি কোথাও লুকানোর চেষ্টা করলেও মুক্তি নেই, কারণ নিজেদের শিকার খুঁজতে ডলফিন নিশাচর বাদুড়ের মতো Echo Location ব্যবহার করে।
ডলফিন প্রাণীটি নিজ দলের সদস্যদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি খোলা সাগরে ভেসে থাকা মানুষকে হাঙ্গরের আক্রমণ থেকে রক্ষার নজিরও রেখেছে একাধিকবার। তবে এক্ষেত্রে তারা আক্রমণকারী হাঙ্গরটিকে ধাওয়া করে হত্যার বদলে অসহায় মানুষটির চারপাশে অবস্থান নেয় আক্রমণের সুযোগ না পেয়ে কিছুক্ষণ পর হাঙ্গরটি শিকারির খোঁজে অন্যদিকে চলে যায়।
তবে হাঙ্গর মাছ তার দুঃস্বপ্নে যে ডলফিনটিকে দেখতে পায়, তা কিলার হোয়েল বা অর্কা নামে পরিচিত। বিশ্বের বৃহত্তম শিকারি প্রাণীর খেতাবধারী এই প্রজাতির ডরফিনের খাদ্য তালিকায় বিভিন্ন ধরনের হাঙ্গর রয়েছে। যে কারণে খোলা সাগরেও কিলার হয়ে অধ্যুষিত এলাকাগুলো এড়িয়ে চলে সব প্রজাতির হাঙ্গর এরা এমনকি Great White প্রজাতির বিভীষিকাময় হাঙ্গর কেও ছেড়ে কথা কয় না।
বিস্ময়কর ব্যাপার হলো শিকারের পর এই ডলফিন গুলো পুরো হাঙ্গরটাকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে না। স্রেফ কলিজা এবং হৃদপিণ্ড টুকু খেয়েই তারা মৃত হাঙ্গরটাকে ফেলে চলে যাই। বিজ্ঞানীদের ধারণা হাঙ্গরের কলিজা এবং হৃদপিন্ডে বিদ্যমান বিশেষ খাদ্যগুনের জন্য ডলফিন গুলো এমন অদ্ভুত আচরণ করে। এই কারণে গত কয়েক বছর ধরে গ্রেট ওয়াইড প্রজাতির হাঙ্গর গুলো ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ এলাকা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা শুরু করেছে।
Report This Post
All sources, including information, images, and videos, for our posts are listed here . If there are any copyright claims, please report this post or contact us or mail at info@beeblogquester.com.