সূরা আল-হাক্কাহ‌: অডিও, নামকরণ ও অন্যান্য তথ্য

সূরা আল-হাক্কাহ‌: অডিও, নামকরণ ও অন্যান্য তথ্য

সূরা আল-হাক্কাহ‌: অডিও, নামকরণ ও অন্যান্য তথ্য
: :

সূরা আল-হাক্কাহ‌ পবিত্র কুরআন শরীফের ৬৯ তম সূরা, এর আয়াত অর্থাৎ বাক্য সংখ্যা ৫২ এবং রূকু তথা অনুচ্ছেদ সংখ্যা ২। সূরা আল-হাক্কাহ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরাটির প্রথম শব্দটি থেকে এই সূরার নামটি গৃহীত হয়েছে; অর্থাৎ, যে সূরাটি الحآقّة (‘হাক্কাহ‌’) শব্দটি দ্বারা শুরু হয়েছে এটি সেই সূরা।

নাযিল হওয়ার সময় ও স্থান

এ সুরাটি নবী মুহাম্মদে র মক্কী জীবনের প্রাথমিক যুগে অবতীর্ণ সূরাসমূহের একটি। এর বিষয়বস্তু থেকে বুঝা যায়,সূরাটি যে সময় নাযিল হয়েছিলো তখন নবীর বিরোধিতা শুরু হয়েছিলো ঠিকই কিন্তু তখনো তা তেমন তীব্র হয়ে ওঠেনি। মুসনাদে আহমাদ হাদীস গ্রন্থে উমর থেকে বর্ণিত হয়েছে: ইসলাম গ্রহণের পূর্বে একদিন রসূলুল্লাহকে কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে আমি বাড়ি থেকে বের হলাম। কিন্তু আমার আগেই তিনি মসজিদে হারামে পৌছে গিয়েছিলেন। আমি সেখানে পৌছে দেখলাম তিনি নামাযে সূরা আল হাক্কাহ পড়ছেন। আমি তার পেছনে দাঁড়িয়ে গেলাম, শুনতে থাকলাম। কুরআনের বাচনভঙ্গি আমাকে বিস্ময়ে অভিভূত করে ফেলেছিলো। সহসা আমার মন বলে উঠলো, লোকটি নিশ্চয়ই কবি হবে। কুরাইশরাও তো তাই বলে। সে মহূর্তেই নবীর মুখে একথাগুলোর উচ্চারিত হলোঃ “এ একজন সম্মানিত রসূলের বাণী। কোন কবির কাব্য নয়।” আমি মনে মনে বললামঃ কবি না হলে গণক হবেন। তখনই পবিত্র মুখে উচ্চারিত হলোঃ “এ গণকের কথা ও নয়। তোমরা খুব কমই চিন্তা-ভাবনা করে থাকো। একথা তো বিশ্ব-জাহানের রব বা পালনকর্তার পক্ষ থেকে নাযিলকৃত।” এসব কথা শোনার পর ইসলাম আমার মনের গভীরে প্রভাব বিস্তার করে বসলো। উমরের এ বর্ণনা থেকে জানা যায়, সূরাটি তার ইসলাম গ্রহণের অনেক আগে নাযিল হয়েছিলো। কারণ এ ঘটনার পর বেশ কিছুকাল পর্যন্ত তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি।

বিষয়বস্তুর বিবরণ

সূরাটির প্রথম রুকূ’তে আখেরাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। আর দ্বিতীয় রুকু’তে কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিল হওয়া এবং মুহাম্মাদ যে, আল্লাহর রসূল তার সত্যতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

কিয়ামত ও আখেরাতের কথা দিয়ে প্রথম রুকূ’ শুরু হয়েছে। কিয়ামত ও আখেরাত এমন একটি সত্য যা অবশ্যই সংঘটিত হবে। আয়াত ৪ থেকে ১২ তে বলা হয়েছে যে, যেসব জাতি আখেরাত অস্বীকার করেছে শেষ পর্যন্ত তারা আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়েছে। অতপর ১৭ আয়াত পর্যন্ত কিয়ামত কীভাবে সংঘটিত হবে তা বর্ণনা করা হয়েছে। যে উদ্দেশ্যে আল্লাহ দুনিয়ার বর্তমান জীবন শেষ হওয়ার পর মানুষের জন্য আরেকটি জীবনের ব্যবস্থা করেছেন ১৮ থেকে ২৭ আয়াতে সে মূল উদ্দেশ্যটি বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে - সেদিন সব মানুষ তার রবের আদালতের হাজির হবে; সেখানে তাদের কোন বিষয়ই গোপন থাকবে না। প্রত্যেকের আমলনামা তার নিজের হাতে দিয়ে দেয়া হবে। পৃথিবীতে যারা এ উপলব্দি ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে জীবন যাপন করেছিলো যে, একদিন তাদেরকে আল্লাহর কাছে নিজ নিজ কাজের হিসেব দিতে হবে, যারা দুনিয়ার জীবনে নেকী ও কল্যাণের কাজ করে আখেরাতের কল্যাণ লাভের জন্য অগ্রিম ব্যবস্থা করে রেখেছিলো তার সেদিন নিজের হিসেব পরিষ্কার ও নিরঝঞ্ঝাট দেখে আনন্দিত হবে। পক্ষান্তরে যেসব লোক আল্লাহর পারোয়া করেনি, বান্দার হকও আদায় করেনি, তাদেরকে আল্লাহর পাকড়াও থেকে রক্ষা করার মত কেউ থাকবে না। তারা জাহান্নামের আযাব ভোগ করতে থাকবে।

দ্বিতীয় রুকূ’তে মক্কার কাফেরদেরকে বলা হয়েছে - এ কুরআনকে তোমরা কবির কাব্য ও গণকের গণনা বলে আখ্যায়িত করছো। অথচ তা আল্লাহর নাযিলকৃত বাণী। তা উচ্চারিত হচ্ছে একজন সম্মানিত মুখ থেকে। এ বাণীর মধ্যে নিজের পক্ষ থেকে একটি শব্দও হ্রাস বা বৃদ্ধি করার ইখতিয়ার রসূলের নেই। তিনি যদি এর মধ্যে তার মনগড়া কোন কথা শামিল করে দেন তাহলে আমি তার ঘাড়ের শিরা (অথবা হৃদপিণ্ডের শিরা) কেটে দেবো। এ একটি নিশ্চিত সত্য বাণী। যারাই এ বাণীকে মিথ্যা বলবে শেষ পর্যন্ত তাদের অনুশোচনা করতে হবে।


Report This Post

All sources, including information, images, and videos, for our posts are listed here . If there are any copyright claims, please report this post or contact us or mail at info@beeblogquester.com.