সপ্তাহে ৫০ ঘন্টা কাজ: ভালো না মন্দ?

সপ্তাহে ৫০ ঘন্টা কাজ: ভালো না মন্দ?


৪০ বা ৫০ ঘন্টা কাজ প্রতি সপ্তাহে! দিনে ৮-৯ ঘন্টা করে কাজ, সপ্তাহে ৫-৬ দিন। কথা শুনে মনে হতে পারে, আমরা এত কাজ করি? আদতে ৪০-৫০ ঘন্টার চেয়ে অনেক বেশি কাজ করা হয় আমাদের। 

আমরা যন্ত্রের মতো কাজ করেই যাচ্ছি, নাওয়া-খাওয়া কী তা তো প্রায় ভুলেই গেছি। অতিরিক্ত কাজের ফলে হওয়া ক্ষতির হিসেব আজ করব আমরা। আর কীভাবে আমরা এর সম্ভাব্য সমাধান করতে পারি, সেই হিসেবও করা হবে। 

কী হতে পারে দীর্ঘ সময় কাজ করলে?

দীর্ঘ সময় কাজ করলে শরীরে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ইনসমনিয়া দেখা দেয়। অন্যদিকে, নানা মানসিক সমস্যা, কর্মক্ষেত্রে নানা অসুবিধা, যেমন- কাজ ঠিকভাবে না করে, আহত হওয়া, ক্ষুধামন্দাসহ অনেক দৃশ্যমান আর অদৃশ্য জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। আমরা এটা প্রায়ই এড়িয়ে যাই কিছু হবে না ভেবে। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ডায়াবেটিসসহ নানা ধরনের শারীরিক অসুস্থতার পাশাপাশি মৃত্যুঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। যেহেতু দীর্ঘসময়, দীর্ঘদিন কাজ করা হয়, কোনো বিরতি আমাদের শরীর পায় না, সেহেতু আমাদের ব্রেইন সেল, হার্ট ড্যামেজ হতে শুরু করে। এর অন্যতম কারণ মানসিক চাপ, অবসাদ, ও ক্লান্তি। এছাড়াও শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতির সাথে সাথে মানসিক স্বাস্থ্যেরও বেশ অবনতি ঘটে। 

ক্ষুধামন্দা, অবসাদ, উদ্বিগ্নতা, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, ইনসমনিয়াসহ নানা ধরনের মানসিক অসুস্থতা জেঁকে বসে। অনেক ক্ষেত্রে অসুস্থতা ক্রনিক আকার ধারণ করে, আত্মহত্যার চিন্তা বা প্রচেষ্টার সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত কাজের চাপে আমাদের ঘুম হয় না। ফলে কাজে মনোযোগ কমে যায়, বিরক্তি আসে, সর্বদা শরীর ম্যাজ ম্যাজ করে। 

আবার, অনেকের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ঝুঁকি নেয়ার সাহস, খিটখিটে মেজাজ তৈরি হয়। সবকিছু মিলিয়ে মূলত কাজের ক্ষতি হয়, যা শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতি করে। তবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হলো- আপনি মনযোগী হতে পারবেন না, কাজও ঠিকভাবে করতে পারবেন না। কাজে প্রচুর ভুল হয়, ক্ষতি হয়, ফলশ্রুতিতে কাজ বার বার করার প্রয়োজন হতে পারে।

সমাধান

১) সংশ্লিষ্ট কোম্পানির লাঞ্চ ব্রেকসহ, টি ব্রেক দেয়া প্রয়োজন, যাতে দীর্ঘ ৭-৯ ঘন্টা বসে থাকতে না হয়। 

২) অফিস রুমে প্রয়োজনীয় আলো-বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। যেমন- খোলা জানালা বা পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো এবং অক্সিজেনের সরবরাহ থাকতে হবে। 

৩) অপ্রয়োজনীয় মিটিংয়ের আয়োজন থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। অপ্রয়োজনে অফিসে কর্মীদের রাখা যাবে না। 

৪) অফিস স্টাফদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং সাময়িক বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেমন- গেমিং জোন বা বইপড়ার জন্য ছোট্ট একটা কর্ণার। 

৫) ওভারটাইম কাজ না করানো, ছুটির দিনে খুব জরুরি না হলে কাজ না করানো।

সবগুলোই যে মেনে চলতে হবে তা না, নিজের জন্য যেটা ভালো, নিজের যেটা সুবিধা হবে, ঠিক সেই কাজগুলোই করবেন। নিজের ভালোর জন্য যা করার সেটা করলেই টানা কাজের জন্য যে ক্ষতি হচ্ছে সেটা থেকে কিছুটা হলেও মুক্তি পাবেন।

অতিরিক্ত কাজ করলে ট্যাক ভারী হয়তো হতেই পারে, কিন্তু শারীরিক অসুবিধাও পাল্লা দিয়ে বাড়ে। একদিকে যেমন কর্তৃপক্ষের সতর্ক হওয়া প্রয়োজন, তেমনি দরকার কর্মীদের সচেতন হওয়া। বিগত তিন বছর ধরে হোম অফিস বা হাইব্রিড অফিস জনপ্রিয় হচ্ছে। এর ফলাফল কিন্তু মন্দ নয়। কিছুদিন আগেই রায়ান রোসলান্সকি, লিঙ্কড ইনের সিইও বলেছেন, অফিসের আসা-যাবার সময় হিসেবের দিন এখন আর নেই। তার মতে, কাজ ঠিকমতো হলেই হলো। কে কোথায় বসে কাজ করছে সেটা নয়।


Report This Post

All sources, including information, images, and videos, for our posts are listed here . If there are any copyright claims, please report this post or contact us or mail at info@beeblogquester.com.