পিঁপড়াদের মহাযুদ্ধ!
পিঁপড়াদের মাঝে প্রতিদিন বিশ্বযুদ্ধ হয়। আর এতে ঝরে পড়ে লাখ লাখ পিঁপড়ার প্রাণ। শুনে অবাক হচ্ছেন তো? পিঁপড়াদের নিষ্ঠুর জগতে এমনই হয়। পিঁপড়ার অন্তত ৫০ টি প্রজাতির মাঝে দাস প্রথা বিদ্যমান। চরম শ্রম বিভাজনের এ এক অভূতপূর্ব নিদর্শন। বিজ্ঞান জানে না কী ভাবে পিঁপড়াদের মাঝেও এমন বিভাজন তৈরি হলো। তবে কিছু প্রজাতি দাস প্রথার এই বাণিজ্যকে একেবারে নিখুঁত করে তুলেছিল।
পোলিয়ার গ্রাস ক্রীতদাস পিঁপড়া সম্প্রদায়ের মাঝে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। এরা সাধারণত ৪ থেকে ১০ মিলিমিটার লম্বা হয়। গায়ের রং বাদামি থেকে কালো। পোলিয়ার গ্রাস দাসত্ব কে এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করে যে, এরা নিজেদের খেয়াল রাখাটাও ভুলে গেছে। নিজেরা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়না। বাসা বানায় না। নিজেদের বাচ্চাদের যত্ন নেয় না এবং তাদেরকে খাবারও দেয় না। তাহলে তারা কী করে?
তাদের একটাই কাজ অভিযানে অংশ নেওয়া। পিঁপড়া কলোনিতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই থাকে দাস। পুরো কলোনিটা নিয়ন্ত্রণ করে কয়েকশত পোলিয়ার গ্রাস এবং মাত্র একজন রাণী পিঁপড়া।
একটা অভিযানের কথা বলছি। গ্রীষ্মের সকাল। মাটি থেকে ফর্ম্যাইকা পিঁপড়াদের একটা কলোনি যেখানে ১০ হাজার পিঁপড়ার বাস। সেখানেই হানা দেবে পোলিয়ার গ্রাস। সকালে পোলিয়ার গ্রাসের একটা স্কাউট এসে জায়গাটা দেখে যায়। দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামতেই আক্রমণ শুরু হয়।
হাজার হাজার সেনা জড়ো হয় ফর্ম্যাইকা পিঁপড়ার কলোনির বাইরে। সেনাবাহিনীর দৈর্ঘ্য হয় ১০ মিটারের মতো। ফর্ম্যাইকা কলোনিতে ঢুকে পড়ে পোলিয়ার গ্রাস। তীব্র সংঘর্ষ বাঁধে। ফর্ম্যাইকা পিঁপড়ারা এসিদের মতো উপাদান নিক্ষেপ করে। কিন্তু তাতেও পোলিয়ার গ্রাসকে দমানো যায় না।
বিভিন্ন পদ্ধতি তারা ব্যবহার করে। এটি অন্যতম রাসায়নিক। শরীর থেকে এমন একটি রাসায়নিক উপাদান তারা ছাড়তে থাকে যা ফর্ম্যাইকা পিঁপড়া গুলোতে বিভ্রান্ত করে। আর কলোনিটা পোলিয়ার গ্রাস জব্দ করে নেয়।
এরপর শুরু হয় তাদের মূল কাজ। এই অভিযানটা যে কারণে করেছে তার খোঁজ চলতে থাকে। ফর্ম্যাইকা পিঁপড়ার লার্ভাগুলো তা সংগ্রহ করে এবং বাসা থেকে বের করে নিয়ে আসে। আর এরা তাদের পরবর্তী দাস।
কিন্তু পোলিয়ার গ্রাসরা কী ভাবে পিঁপড়া গুলোকে দাস বানায়?
একশ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবী জুড়ে ছিল পিঁপড়াদের রাজত্ব। সামাজিক প্রাণী হিসেবে তাদের প্রতিষ্ঠিত করে রাসায়নিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। রাসায়নিক সংকেতের মাধ্যমেই তারা বুঝতে পারে তাদের কী করতে হবে, জানতে পারে কে বন্ধু, কে শত্রু। লার্ভা থেকে ফোঁটা বাচ্চাগুলোকে পোলিয়ার গ্রাসরা এমন রাসায়নিক সংকেত দিতে থাকে যে তাদের জন্মই হয়েছে কাজ করার জন্য এবং রাণীর সেবা করার জন্য।
অর্থাৎ ফর্ম্যাইকা কলোনি থেকে ছিনিয়ে আনা পিঁপড়া গুলো দাস হয়ে গেল। এবং দাস হয়েই বাকী জীবন কাটিয়ে দেয়। আর নতুন অভিজানের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে। পিঁপড়াদের এই মহাযুদ্ধ প্রতিদিন চলছে। বন্য এনং হিংস্র পদ্ধতিতে কোটি কোটি পিঁপড়া এই লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে। জীবজগতে বিস্ময়ের শেষ নেয়। আমরা কতটুকুই বা জানি?
Report This Post
All sources, including information, images, and videos, for our posts are listed here . If there are any copyright claims, please report this post or contact us or mail at info@beeblogquester.com.