পাত্রী দেখা!

পাত্রী দেখা!


রফিকের যেহেতু বিয়ের বয়স হয়েছে, তাই সিদ্ধান্ত নিল বিয়েটা করেই ফেলবে। বিয়েতো আর এমনি এমনি করা যায় না। তার জন্য মেয়ে খুঁজে বের করতে হবে। এই কাজে অত্যন্ত দক্ষ রফিকের এক দুলাভাই আছেন। যার ওপর পড়লো তার জন্য বউ খোঁজার ‘গরু দায়িত্ব’। গরু দায়িত্ব এজন্য বললাম, হারানো গরু খুঁজতে যে কষ্ট সহ্য করতে হয় বউ খুঁজে বের করতেও সেরকম কষ্ট সহ্য করতে হয়।

যেহেতু তার দুলাভাই আলু-পটল টাইপের লোক, সে হিসেবে তাকে দিয়েই রফিকের বউ খুঁজে বের করা যাবে বলে ঘরের ঊর্ধ্বতন সদস্যরা মনে করেন। যথারীতি তিনি এক মেয়ের সন্ধান পেলেন। রফিকরা পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করলো। যারা মেয়েকে দেখে এবং তার সার্বিক দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে বউ হিসেবে সে নমিনেশন পাওয়ার যোগ্য কিনা।

কমিটির প্রধান হিসেবে মনোনীত হয়েছেন তার শ্রদ্ধেয় বড় আপা। তিনি একটু বেশি চালাক হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। তার চোখ ফসকে নড়বড়ে বউ ঘরে চলে আসবে তা ঘরের কেউ বিশ্বাসই করে না। রফিক যেহেতু পাত্র, তাই তাকেও সাথে যেতে হবে মেয়ে দেখার জন্য।

রফিক সুন্দর লাগার জন্য কড়া শেভ করে নিল। জিন্সের প্যান্টের সাথে ঝকঝকে লাল একটা শার্ট গায়ে দিয়ে নিল। তাছাড়া এক জোড়া কেডস পরে চোখে সানগ্লাসও পরে নিল। আজ মেয়েটাকে দেখিয়ে দিবে সে কত ধানে কত চাল। রফিক বেশি কথা বলে, তাই ঘটক সাহেব তাকে একটু কথা কম বলার পরামর্শ দিলেন। সে যেন আগ বাড়িয়ে কিছু না বলে তা তিনি বারবার তাকে খেয়াল করিয়ে দিলেন।

মেয়েদের বাড়িতে যখন যাওয়ার সময়, প্রচণ্ড বৃষ্টি নামল। কথায় আছে, অতি সাজে তাতে নষ্ট। ঠিক তাই হলো। তাদের ঘরে ঢোকার আগে একটা বড় উঠান পার করতে হয়। বৃষ্টির কারণে উঠান পিচ্ছিল হয়ে ছিল। যেই না রফিক উঠানটি পার হতে যাব, অমনি ধপাস। সে ধপাস করে পড়ে যাওয়াতে হি হি হি করে হাসির শব্দ তার কানে এলো। প্যান্টে যতই কাদা লাগুক সে সানগ্লাসটা ভালো করে নাকের সাথে চেপে ধরলো। যাই হোক স্টাইল তো ঠিক রাখতে হবে। কী বলেন!

ঘরে ঢুকেই এমন সিস্টেম করে বসলো যাতে তার গায়ে কাদা লাগার দৃশ্য মেয়েটি দেখতে না পায়। সে মুখে হাসি রাখলো। হাসলে মেয়েরা নাকি ছেলেদের প্রেমে পড়ে যায়। মেয়েটিকে সবার সামনে আনা হলো। চশমার ফাঁক দিয়ে একটু এঙ্গেল করে মেয়েটিকে দেখে নিল সে। দেখতে ভালোই লাগল। তবে মুখের সৌন্দর্য ঠিকমতো আঁচ করতে পারলো না সে। মুখে যেভাবে সাদা পাউডার দিয়ে ডিস্টেম্বার করেছে, তাতে করে মুখের প্রকৃত সৌন্দর্য নির্ণয় করা তার মতো এই হেবলার জন্য দুরূহই হয়ে গেল।

ঘরে ঢুকেই মেয়েটি উচ্চঃস্বরে বলে উঠল হাই…। রফিক ভাবলো সে কোন হাইস্কুল থেকে পাস করেছে মেয়েটি তাই জানতে চাইল। কিন্তু তার ধারণায় সজোরে ধাক্কা খেলো যখন মেয়েটি বলে উঠল হাই আঙ্কেল। আঙ্কেল বলাতে তার মনটা ভেঙে খান খান আট খান হয়ে গেল। কিন্তু সে কোনোভাবেই হাসি বন্ধ করলো না।

তার সামনে নানা পদের খাবার দেয়া হলো। সে আবার খাবারকে না বলতে পারে না। তাই সমানে খেতে লাগল। তার খাওয়া দেখে মেয়েটি চোখ বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে থাকল। মেয়েটির তাকানো দেখে সে ভাবলো তার খাওয়াতে হয়তো আর্ট আছে, তাই মেয়েটি চোখ বড় করে তাকাচ্ছে। যতই চোখ বড় করে তাকাক সে কোনোভাবেই খাওয়া বন্ধ করল না।

দুলাভাই রফিককে ও মেয়েটিকে আলাদা করে কথা বলার জন্য বললেন। মেয়েটির সামনাসামনি বসে চোখে চোখ রাখতে তার লজ্জা লাগছিল। তাই তার চোখের দিকে তাকালো না রফিক। মেয়েটি রফিককে বলল, 'আমার ফেরেম আছে।’

রফিক ভাবলো তাকে মেয়েটির এতই পছন্দ হয়েছে যে, মেয়েটি হয়তো রফিকের ছবি বাঁধাই করে তার ফ্রেমে রাখার কথা বলছে। কথা শুনে রফিক হাসতে লাগল। কিন্তু একটু পরেই তার হাসি বন্ধ হয়ে যায় যখন মেয়েটি তাকে বলল, 'আমার একটা ছেলের সাথে প্রেম আছে! আপনি এবার আসতে পারেন, আঙ্কেল!'


Report This Post

All sources, including information, images, and videos, for our posts are listed here . If there are any copyright claims, please report this post or contact us or mail at info@beeblogquester.com.