না খেয়ে কত দিন বেঁচে থাকা সম্ভব?

না খেয়ে কত দিন বেঁচে থাকা সম্ভব?


৭৪ বছর বয়সে জীর্ণ-শীর্ণ দেহের মহাত্মা গান্ধী একবার অনশনে ২১ দিন পর্যন্ত না খেয়ে ছিলেন! নানারকম দুর্যোগে ধ্বংসস্তূপের তলে চাপা পড়ে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকার নজিরও অতিশয় একটা দুর্লভ নয়। এসব ক্ষেত্রে ব্যক্তির বয়স, ওজন, শারীরিক সুস্থতা, জিনগত বৈশিষ্ট্য, পরিবেশের তাপমাত্রা, দেহে জল ও চর্বির সংখ্যা প্রভৃতি নিয়ামকের উপর বেঁচে থাকা নির্ভর করে। কিন্তু না খেয়ে সঠিক কত দিন বেঁচে থাকা যায় এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো গবেষণা নেই। কেননা দিনের পর দিন কোনো ব্যক্তিকে না খেয়ে রেখে তত্ত্বানুসন্ধান নৈতিকতার দিক হতে ১টি প্রচুর প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়। তবে নানারকম দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ, যুদ্ধ, অনশন পক্ষান্তরে ধর্মঘটের নানারকম ঘটনা থেকে বিজ্ঞানীরা অন্ন ছাড়া মানুষের বেঁচে থাকার একটা আন্দাজ প্রদান করেন। 

roar.wikpidea.no.eating

কোনো রকম খাদ্য ও জল ছাড়া মেক্সিমাম এক সপ্তাহের মতো বেঁচে থাকা সম্ভব। কিন্তু কেবলমাত্র আহার খাওয়া বাদ রেখে কেবল পানি পান করে দুই থেকে তিন মাস পর্যন্ত বেঁচে থাকা পসিবল থেকে পারে। অনশন-ধর্মঘটে ঐচ্ছিকভাবে খাদ্য খাওয়া হতে বিরত থাকার ক্ষেত্রে মোটামুটি ৪৫-৬১ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকার নমুনা পাওয়া যায়। ২০১৮ সালে ১টি গবেষণায় লক্ষ্য যায়- ১৮.৫ বিএমআই মানের নিচের কোনো লোক স্বাভাবিক বিএমআই-এর মানুষের চেয়ে প্রায় ৪ বছর পর্যন্ত কম বাঁচে। তাই ব্যক্তির ওজন, দৈহিক কাঠামো, বয়সের ন্যায় নিয়ামকগুলোও না খেয়ে বেঁচে থাকার সময়ে ঢের পার্থক্যের প্রস্তুত করে।

না খেয়েও কীভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়? 

দিনের পর দিন না খেয়ে বেঁচে থাকা অনেকের নিকট এক বিস্ময়ের বিষয়। খাদ্যই আমাদের দৈহিক কার্যকলাপের চালিকাশক্তি। শর্করা জাতীয় অন্ন হজমের পর তা গ্লুকোজে রুপান্তর হয়, যা দেহে শক্তির জোগান দেয়। প্রয়োজনমাফিক শক্তির জোগান দেওয়া শেষে এক্সট্রা গ্লুকোজ যকৃতে গ্লাইকোজেন রূপে জমা থাকে। মোটামুটি ২৪ ঘণ্টার মতো না খেয়ে থাকার পর শরীরের স্বাভাবিক কার্যকলাপে বিঘ্ন ঘটে। শরীরে গ্লুকোজের যোগাড় না থাকায় এক সময় যকৃতে জমা থাকা গ্লাইকোজেন ভেঙে গ্লুকোজে রুপান্তর হয়। এই গ্লুকোজই তাৎক্ষণিক শক্তির জোগান দেয়।

যকৃত গ্লুকোজ জমা রাখতে পারে যা প্রয়োজনের সময় শক্তির জোগান দেয়

যকৃত গ্লুকোজ জমা রাখতে পারে যা প্রয়োজনের সময় শক্তির জোগান দেয়; Image Source: medline plus

 কিন্তু একসময় যকৃতের সঞ্চয়ও সম্পন্ন হয়ে যায়। তারপর দেহ চর্বি ভেঙে শক্তির ডিমান্ড মেটায়। তাই রোগা-পাতলা ব্যক্তির তুলনায় স্থূল ব্যক্তিরা না খেয়ে বেশি সময় বেঁচে থাকতে পারেন! এভাবে ১ম পাঁচ দিনে ব্যক্তির ১-২ কেজি ওজন কমে যায় যায়। শরীরে পানিশূন্যতা এই ওজন কমে যাওয়ার অন্যতম ১টি কারণ। 

এরপর শক্তির সম্পন্ন ভরসাস্থল হিসেবে দেহ মাংসপেশীর বৃথাব্যয় করার জন্য আরম্ভ করে। সপ্তাহের পর সপ্তাহ না খেয়ে থাকার পর প্রত্যেক দিন ব্যক্তির প্রায় ৩০০ গ্রাম করে ওজন কমতে থাকে। এভাবে ভিটামিন ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের চরম ঘাটতি একপর্যায়ে ব্যক্তির মরণ ঘনিয়ে আনে। 

দীর্ঘদিন না খেয়ে থাকলে দেহে কী কী সমস্যা হয়?

দীর্ঘদিন না খেয়ে থাকার ফলে সন্তপর্ণে সন্তপর্ণে দেহের স্বাভাবিক কাজকর্মে ব্যাঘাত ঘটে। রাজ্যের অবসাদ আর দুঃখ ভর করে বসে দেহে। হৃৎপিণ্ড আরম্ভ রাখার অনেক শক্তিও থাকে না আর।  রক্তচাপ ও নাড়ির গতিও এজন্য হ্রাস পায় যায়। পাকস্থলীতে খাবারের অপ্রাচুর্য বমি বমি ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহসহ নানা জটিলতার প্রস্তুত করে।

দীর্ঘদিন না খেয়ে থাকার প্রভাব

দীর্ঘদিন না খেয়ে থাকার প্রভাব;Image Source: verywell

শুষ্ক ত্বক, চুল পড়া, অস্থি অসার হয়ে যাওয়া কিংবা মেয়েদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব হওয়ার মতো হরমোনঘটিত সমস্যাও নোটিশ যায়। প্রয়োজনীয় শক্তির দারিদ্রে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজকর্মেও প্রচুর ব্যাঘাত ঘটে। 


Report This Post

All sources, including information, images, and videos, for our posts are listed here . If there are any copyright claims, please report this post or contact us or mail at info@beeblogquester.com.