কাঁঠাল কেন বাংলাদেশের জাতীয় ফল?

কাঁঠাল কেন বাংলাদেশের জাতীয় ফল?


বাংলাদেশের জাতীয় ফুল সাদা শাপলা, জাতীয় পাখি দোয়েল, জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আর ফল হচ্ছে কাঁঠাল। বাকি সব গুলোতে কারও কোনও আক্ষেপ না থাকলেও, কাঁঠাল নিয়ে অনেকেরই আছে! তাদের মতে, কাঁঠাল না হয়ে আম কে নির্বাচন করা উচিৎ ছিল জাতীয় ফল হিসেবে। তাহলে 2016 সালে একথা কি কারও মাথায় আসেনি? আজকের ব্লগে এই নিয়ে আলোচনা হবে। বাংলাদেশের জাতীয় ফুল, ফল, পাখি এবং পশু নির্বাচন করার প্রসেস এবং কী কী বিবেচনা করা হয়?

বাংলাদেশের জাতীয় পশু, ফল, ফুল, পাখি, মাছ, বৃক্ষ
রয়েল বেঙ্গল টাইগার
রয়েল বেঙ্গল টাইগার
কাঁঠাল
কাঁঠাল
শাপলা
শাপলা
দোয়েল
দোয়েল
ইলিশ
ইলিশ
আম গাছ
আম গাছ

প্রথমে আন্তর্জাতিক সঠিক ভাবে ব্যাপারটা যদি অ্যানালাইসিস করেন তাহলে দেখবেন কোনও কিছুকে ন্যাশনাল বা জাতীয় মর্যাদা দেওয়া কোনও নতুন ব্যাপার না। এটা অনেক দিন ধরেই বিভিন্ন দেশে হয়ে আসছে। বলা যায় ট্র্যাডিশনে পরিণত হয়েছে। এটা করার ক্ষেত্রে দুটো জিনিসের দিকে লক্ষ্য রাখা হয়। Availability অর্থাৎ জিনিসটা দেশে কী পরিমাণে পাওয়া যায় বলা যায় সহজপ্রাপ্য হওয়া বাধ্যতামূলক। কারণ একটা জিনিস প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যাওয়া মানেই সকলেই এটিকে চেনে। ফলাফল হচ্ছে দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে সাহিত্য সংস্কৃতির একটা অংশ হয়ে যায়। এই জিনিসগুলো পরবর্তীতে বাইরের মানুষের কাছেও এটি একটি দেশকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে সহজেই। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যাচাইকরণ অর্থাৎ আশপাশের অন্য কোনো দেশ আগে থেকেই জিনিসকে তাদের জাতীয় মর্যাদা দিয়েছে কি না। যদি দিয়ে থাকে তাহলে ওই জিনিসকে আর নির্বাচন করা হয় না।

প্রশ্ন হতে পারে কেন? কারণটা আপনি নিজেই ভাবলেই বুঝতে পারবেন। এই জিনিসগুলো দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার জন্য ইউনিক হওয়া এমন রিপ্রেজেন্টেটিভ টুলগুলো একটা বৈশিষ্ট্য। এমন না হলে যে ফল দিয়ে জাপানকে চেনা যায় সেই ফল দিয়ে বাংলাদেশ মানুষ চিনবেন। তখন রিপ্রেজেন্টেটিভ প্রতীকের মূল উদ্দেশ্যটা কি তা সফল হয়? বোঝার জন্য জাতীয় প্রতীকের কথা চিন্তা করতে পারে।

বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক

বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক বা The National Emblem এ শাপলা, ধান গাছ এবং পাট নিয়ে তৈরি একটি চিহ্ন। কেন্দ্রে পানিতে ভাসমান একটি শাপলা থাকে এবং তার দুই পাশে ধানের দুটি শীষ। এই দুটি শীষের পরে দুই দিকে থাকে দুইটি করে তারা। সার্কেল শেষ হয় পাটগাছের পরস্পরযুক্ত তিনটি পাতার কাছে এসে। বাংলাদেশে নদীমাতৃক দেশ এই ব্যাপারটা রিপ্রেজেন্ট করে পানিতে ভাসমান শাপলা। ধান নির্দেশ করে বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য কে। আর চারটি তারা হচ্ছে দেশের চারটি  Funding Principles এর নির্দেশক। সেগুলো হলোঃ- Nationalism, Secularism, Socialism এবং Democracy। এখানকার ধান, শাপলা, পাট সব বাংলাদেশের সাথে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। বলতে পারেন কথাটি কালচারের দিক থেকেও সত্য, আবার সবার কাছে পরিচিত দিক থেকেও। তাই ধানের কথা বললেই দেখবেন বাংলাদেশের কথা মনে আসবে। এখানে ধানের জায়গায় যদি ড্রাগন থাকতো তাহলে অনেকেই বুঝবে এটা চীনের সাথে সংযুক্ত।নিয়মগুলো লিখিত নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম না হলেও জাতীয় প্রতীকের মতো। ফুল, ফল, মাছ এবং পাখির ক্ষেত্রেও একই নীতি ব্যবহার করার চেষ্টা করা হয়।

1971 স্বাধীনতার পর থেকেই জাতীয় প্রতিকূল নির্বাচন প্রস্তুতি শুরু হয়। রয়েল বেঙ্গল টাইগার সর্বপ্রথম নির্বাচিত হয় জাতীয় প্রতীক হিসেবে। উৎস কোথায়? সাল ছিল 1974 এটি স্ট্রেন পাওয়ার এবং রেসিডেন্সের চিহ্ন। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে থাকা একইরকম সাহস ও শক্তির নির্দেশক।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার
রয়েল বেঙ্গল টাইগার

আপনি কি হযরত গাজী পীরের কথা শুনেছেন? গাজী পীর ছিলেন একজন সুফি বা শক্তিশালী আধ্যাত্মিক নেতা। যিনি বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে বসবাস করতেন। একদিন তিনি বোনের মধ্যে দিয়ে হাঁটার সময় একটি ভয়ঙ্কর বাঘের মুখোমুখি হন। কিন্তু তাকে আক্রমণ করার পরিবর্তে বাঘটি তার সামনে মাথা নত করে এবং তার অনুগত সঙ্গী হয়ে ওঠে।

এই গল্প বাংলা লোকসংস্কৃতির প্রজন্মের মধ্যে চলে আসছে অনেক বছর ধরে। এবং আজও বাংলাদেশের অনেক জায়গায় পালিত হয়। মানুষ এবং তার পারিপার্শ্বিক প্রকৃতির গাছপালা, পশু, পাখির মধ্যে গভীর আধ্যাত্মিক সংযোগের একটি শক্তিশালী প্রতীক হিসেবে দেখা হয় এই লোককাহিনিকে। আমাদের সংস্কৃতির দিকে লক্ষ্য করলে বাঘকে নিয়ে এমন বাংলা লোককাহিনি, কবিতা এবং শিল্প আরও অনেক খুঁজে পাওয়া যাবে।

পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে বাংলাদেশের সুন্দরবন। এই সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের একটি বিস্তীর্ণ ম্যানগ্রোভ বন। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বাসস্থল বলা হয় একে। এবং UNESCO World Heritage Conventionসাইট হিসেবেও স্বীকৃত এটি। এই সুন্দরবনের Ecosystem এর বিরাট পার্ট রয়েল বেঙ্গল টাইগার। Wildlife Conservation Society মতে, এই প্রাণীটি আশপাশের Ecosystem ঠিক রাখে। তাই এই প্রাণীকে সংরক্ষণের চেষ্টা অন্যান্য প্রাণী রক্ষায় সাহায্য করবে। 

সুন্দরবন
সুন্দরবন


An ecosystem is a community of living organisms, such as plants and animals, interacting with their physical and biological environment. These interactions involve the exchange of energy and nutrients, resulting in a dynamic and interconnected web of life.


1974 এর পর 1979 তে নির্বাচিত হয় দ্বিতীয় জাতীয় প্রতিক ফুল। একটা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সভাপতি ছিলেন প্রখ্যাত বাঙালি লেখক ডক্টর শহীদুল্লা কায়সার। নির্বাচনকালে শাপলার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল পদ্ম, জুঁই, গাঁদা এবং গোলাপ। পদ্ম, জুঁই, গাঁদা এবং গোলাপ এত সুপরিচিত ফুলের মাঝে শাপলা কে নির্বাচন করা হয় ওই নীতিগুলো অনুযায়ী। বিবেচনা করা হয় সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক তাৎপর্য। সাধারণত বর্ষা মৌসুমে খালে বিলে সর্বোচ্চ ফুটে থাকে সাদা শাপলা। ফুলের সাদা রং বাংলার মানুষের স্বর্ণতার প্রতিক। আর তার বিস্তৃত পাতাকে বলা হয় দেশের অনেক অনেক নদীর রিপ্রেজেন্টশন। এক কথায় দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রাচুর্যের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশুদ্ধতা, নির্মলতা এবং প্রশান্তির প্রতীক নামে খ্যাত সাদা শাপলার এরকম আরও অনেক তত্ত্ব আছে। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো এক্ষেত্রেও ধর্মের সাথে কিছুটা সংযোগ আছে।

শাপলা ফুল
শাপলা ফুল

1979 পর নতুন নাম যোগ হয় জাতীয় মাছ ইলিশ। শাপলার মতো একইভাবে একটি কমিটি গঠন করে এই কাজ করা হয়। এবারের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ইলিশের পাশাপাশি রুই, কাতলা ও শিং মাছ। Availability এবং অন্য কোনও রাষ্ট্র আগে নির্বাচন করেছে কিনা এই দুটি নীতি। এখন ইলিশের পরিচিত কেমন তার প্রমাণ হিসেবে পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশের রেওয়াজের উদাহরণই একাই একশ। অনেক গল্প, কবিতা এবং গানে ইলিশকে তাঁর সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বাংলা সাহিত্যে।  বাংলাদেশে প্রায় 1.5 মিলিয়ন মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে ইলিশ মাছ ধরা বা সংশ্লিষ্ট কাজের সাথে জড়িত আছে বলে অনেকেরই ধারণা।

ইলিশ মাছ
ইলিশ মাছ

2013 সালে নির্বাচিত হয় জাতীয় পাখি। এবং ধরা হয় 2016 সালে নির্বাচিত হয় জাতীয় ফল। পাখি নির্বাচনে জাতীয় মর্যাদার লড়াইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা টেবিলে ছিল শালিক, দোয়েল, বক সহ তিন চারটি পাখি। অথচ তার মধ্যে দোয়েলকে মনোনীত করা হয়েছে। কারণ পাখিটি দেশের সর্বোচ্চ পাওয়া যায়। শহর থেকে শুরু করে পাহাড়, বন কিংবা গ্রামের নির্জন পুকুরপাড়ে ও তাঁর দেখা মেলে। এ দেশের খুব কম পাখির অবস্থানে রয়েছে এমন জায়গাতে। সাধারণত যে পাখির শহরে থাকে সে আর বসে থাকতে পারে না। বাসস্থান, বিচরণ, ভূমি ও আহারগত কারণে। তবে এক্ষেত্রে সর্বত্রই রয়েছে দোয়েল। এছাড়া দোয়েল কিন্তু অন্য দেশের জাতীয় পাখিই নয়।

দোয়েল পাখি
দোয়েল পাখি

এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, দেশের সর্বোচ্চ কাকের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও কাক কেন হল না জাতীয় পাখি।

মূলত স্বভাবগত কারণেই কাক কারো প্রিয় পাখিদের তালিকায় পড়ে না। এদিকে দোয়েল খুব নিয়োগপত্র একটি পাখি। কখনওই এরা মানুষের কোনও ক্ষতি করে না। তার চেয়েও বড় বিষয় হচ্ছে এই পাখির চমৎকার গানের গলা ভোরবেলা তার মিষ্টি মধুর গন্ধ প্রকৃতির চারপাশ মধুর করে তোলে। 

বার আসা যাক জাতীয় ফল কাঁঠাল প্রসঙ্গে। এদেশে কাঁঠাল চেনে না এমন একজনও পাওয়া দুষ্কর। অনেকেরই মতে। কাঁঠালের আদি নিবাস বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলে। এই আদি নিবাস 1000 বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের সঙ্গে যোগসূত্রকে আরও গভীর করে তুলেছে। এ ছাড়া জাতীয় ফলের মর্যাদা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই ফলের উপকারিতাও পুষ্টিমানের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে।

কাঁঠাল
কাঁঠাল

শুধু মানুষ নয়, গবাদি খাদ্য হিসেবেও কাঁঠাল এবং এই গাছের পাতার জুড়ি নেই। বিভিন্ন রোগের দাওয়াই হিসেবেই কাজ করে ব্যপক। আর কাঁঠাল গাছের কাঠ বেশ উন্নতমানের। মূলত এ সব কারণে কাঁঠালের পরিচিতি শুরু থেকেই কাঁঠাল পায় জাতীয় ফলের মর্যাদা। এক্ষেত্রে আমই কথাও আসতে পারত। কিন্তু আগে থেকে আম ভারতের জাতীয় ফল হিসাবে থাকার কারণে এই প্রস্তাব আর আলোর মুখ দেখেনি। তবে আম গাছ এ দেশে জাতীয় বৃক্ষের মর্যাদা ঠিকই রয়েছে। 


Report This Post

All sources, including information, images, and videos, for our posts are listed here . If there are any copyright claims, please report this post or contact us or mail at info@beeblogquester.com.