একটি শিক্ষনীয় গল্প

একটি শিক্ষনীয় গল্প


এক শিক্ষক শ্রেণী কক্ষে পড়াচ্ছিলেন। সব ছাত্ররাই শিক্ষকের পড়া খুবই মনযোগ দিয়ে শুনছিল। শিক্ষকের জিজ্ঞাসা করা প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর প্রতিটি ছাত্রই উৎসুক ভাবে দিচ্ছিল। কিন্তু এই উৎসুক ছাত্রদের ভিড়েই একজন ছাত্র ছিল যে কিছু না বলেই চুপচাপ শুধু মাথা নিচু করে বসে ছিল।

প্রথম দিন শিক্ষক কিছু বললেন না। প্রথম দিন থেকেই শিক্ষক তার দিকে নজর দিতে শুরু করেন। এভাবে প্রায় ৫-৬ দিন হয়ে গেল, কিন্তু ছাত্রটির অবস্থার কোনোরূপ উন্নতি শিক্ষক দেখতে পেলেন না। একদিন ক্লাসের পর, শিক্ষক সেই ছাত্রটিকে স্টাফ রুমে ডাকলেন, এবং বললেন, "তোমাকে, কয়েকদিন থেকেই খুব উদাস দেখছি। ক্লাসেও মন দাওনা, একজায়গায় মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে থাকো। কি ব্যাপার বলতো? তুমি কি পড়া কিছু বুঝতে পারছো না? নাকি তোমার কোনো সমস্যা হয়েছে?"

ছাত্রটি কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, "স্যার আমার জীবনে কিছুদিন আগে এমন কিছু ঘটনা হয়েছে, যা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। আর এর জন্যই আমি খুব সমস্যায় আছি। কোনো কিছুতেই মন বসছে না। কিছুতেই বুঝতে পারছিনা কি করব? "

শিক্ষক বললেন, "আচ্ছা এক কাজ কর, তুমি আজ সন্ধ্যায় আমার বাড়িতে এসো কেমন।"

সন্ধ্যা বেলা যখন ছাত্রটি শিক্ষকের বাড়িতে এল তখন শিক্ষক ছাত্রটিকে ভিতরে বসার জন্য বললেন এবং তিনি রান্নাঘরে চলে গেলেন। ও শরবত বানাতে লাগলেন। তিনি ইচ্ছা করেই, ছাত্রটির গ্লাসে বেশি বেশি লবণ দিয়ে দিলেন। এরপর শরবতের গ্লাস হাতে নিয়ে বাইরে এলেন, এবং একটি গ্লাস ছাত্রটিকে দিয়ে বললেন, "এই নাও শরবত। ছাত্রটি হাতে শরবতটি নিয়ে, যেই না শরবতের গ্লাসে এক চুমুক লাগিয়েছে, শরবত অতিরিক্ত লবণাক্ত থাকায়, ছাত্রটির মুখে বিকৃত ভাব দেখা গেল।"

এটি দেখে শিক্ষক বললেন-,"কি হল? শরবতটি পছন্দ হয়নি বোধ হয়! ছাত্রটি বলল- না স্যার, সবই ঠিক আছে, কেবলমাত্র একটু লবণ বেশি হয়েছে।"

শিক্ষক বললেন, "ও হোঃ, তাহলে তো এটি এখন ফেলনা হয়ে গেছে, গ্লাসটি দাও, এটি ফেলে দিয়ে নতুন শরবত বানিয়ে নিয়ে আসি।"

কিন্তু ছাত্রটি মানা করে বলল, "না স্যার, খালি লবণটাই তো বেশি হয়েছে। একটু জল দিলেই ঠিক হয়ে যাবে।" 

এই কথাটি শোনার পর শিক্ষক গম্ভীর হয়ে বললেন, " হুম, তুমি একদম ঠিক বলেছ, শরবতটাকে নষ্ট না করে, তাতে কিছু জল মিশিয়ে দিলেই, এটি আবার খাওয়ার উপযুক্ত হয়ে যাবে। এবার এই শরবতটাকে তোমার জীবন ভেবে নাও। যেমন শরবত থেকে লবণ আলাদা করা সম্ভব নয়, ঠিক তেমনই তোমার সমস্যা গুলিকে তোমার জীবন থেকে বাইরে বের করা অসম্ভব। কারণ এগুলি জীবনেরই একটি অংশ। কিন্তু যেভাবে এটিতে একটু চিনি বা জল মিশিয়ে এটিকে মিষ্টি করে খাবারের উপযোগী করা যেতে পারে, ঠিক সেভাবেই তুমিও তোমার জীবনে, মিষ্টি ভাব নিয়ে এসো।"

শিক্ষণীয় নীতিঃ-

মানুষের জীবনে যদি কোনো সমস্যা না থাকত, তাহলে কোনো মানুষই কোনোদিনই কর্ম করতেন না। সমস্যা জীবনের অঙ্গ। সমস্যা আছে বলেই তো জীবনের এত স্বাদ। তাই অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার খারাপ স্মৃতিতে নিজের মন বিসর্জন দিয়ে বেরঙ্গিন ভাবে বসে থাকলে, জীবনে বেঁচে থাকার আনন্দটাই চলে যায়। আমরা চাইলেও আমাদের মন থেকে এগুলিকে দূর করতে পারব না। কিন্তু আমরা চাইলেই ভালো কিছু দিয়ে এগুলিকে ঢেকে রাখতে পারি। আর তাই মনে নতুন নতুন সুন্দর ভাবনা দিয়ে সেই অসুন্দর ভাবনাটিকেও ঢেকে ফেলুন, দেখবেন জীবন থেকে সমস্যা হারিয়ে গিয়েছে।


Report This Post

All sources, including information, images, and videos, for our posts are listed here . If there are any copyright claims, please report this post or contact us or mail at info@beeblogquester.com.